ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে আগামীকাল রোববার কোলনে শেষ ষোলর ম্যাচে টুর্নামেন্টের অপিরিচিত দল জর্জিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে স্পেন। টুর্নামেন্ট ফেবারিট হিসেবে নিজেদের দারুনভাবে প্রমান করা স্প্যানিশরা গ্রুপ পর্বে শতভাগ জয় নিয়ে বেশ আত্মবিশ^াসী হয়েই মাঠে নামবে। কিন্তু তাদের সামনে বড় শঙ্কার নাম জর্জিয়া। প্রথমবারের মত ইউরো চ্যাম্পিয়নীশপে খেলতে এসেই পর্তুগালের মত দলকে পাত্তা না দিয়ে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করা একটি দলকে থামনো যে খুব একটা সহজ হবে না তা অনুমান করতে পারছে লুইস ডি লা ফুয়েন্তের দল।
২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মত ইউরোপীয়ান আসরে গ্রুপ পর্বের সবকটি ম্যাচে জয়ী হয়ে দারুন ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে স্পেন। গ্রুপের প্রথম দুই ম্যাচে জয়ী হবার পর আলবেনিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে স্প্যানিশ কোচ লা ফুয়েন্তে ১০টি পরিবর্তন করে দল সাজিয়েছিলেন। নক আউট পর্বের ম্যাচকে সামনে রেখেই কোচের এই সিদ্ধান্ত ছিল, যদিও শেষ ষোলর প্রতিপক্ষ তখনো নির্ধারিত হয়নি। শীর্ষস্থান নিশ্চিত হওয়ায় বদলী বেঞ্চকে পরখ করে দেখারও একটি সুযোগ এসেছিল। ফেরান তোরেসের ১৩ মিনিটের গোলে লা রোজাদের তৃতীয় জয় নিশ্চিত হয়।
এর আগে জেলসেনকার্চেনে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে শিক্ষা দেয়া স্পেন বার্লিনে ক্রোয়েশিয়াকেও পরাজিত করে আসর শুরু করেছিল। এনিয়ে টানা পঞ্চমবারের মত বড় টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বে খেলতে এসেছে স্পেন। সব মিলিয়ে আটবারের মধ্যে যা সপ্তম।
ড্রয়ে অন্য ভাগের তুলনায় কিছুটা হলেও কঠিন ভাগে পড়া স্পেন গ্রুপ পর্ব থেকেই বড় দলের বিপক্ষে খেলে নিজেদের জার্মানির মাটিতে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছে। কালকের ম্যাচে জিততে পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানি ও সেমিফাইনালে স্পেনের সাথে দেখা হতে পারে ফ্রান্সের ।
ডি লা ফুয়েন্তের অধীনে পুনরুজ্জীবিত স্পেন এখন আরো বেশী সরাসরি খেলার দিকে মনোনিবেশ করেছে। এখনো পর্যন্ত টুর্ণামেন্টে একটি গোলও হজম করেনি। এর আগে ২০১২ সালে বড় টুর্নামেন্টে পরপর চারটি ম্যাচে তারা কোন হজম করেনি। ঐ আসরে তারা সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়। সর্বশেষ কাতার বিশ^কাপে শেষ ষোলতে মরক্কোর কাছে পরাজিত হয়ে স্পেনকে হতাশ হতে হয়। আরো একবার শীর্ষ কোন দলের বাইরের কোন প্রতিপক্ষের কাছে তাদের পরাজিত হতে হযেছিল।
এ পর্যন্ত সব ধরনের প্রতিযোগিতায় স্পেন জর্জিয়ার বিপক্ষে সাত ম্যাচের ছয়টিতেই জয়ী হয়েছে। এর মধ্যে এ বছরের ইউরোর বাছাইপর্বের দুটি ম্যাচও রয়েছে। বাছাইপর্বে প্রথম ম্যাচে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করার পর ঘরের মাঠে ৩-১ গোলে জয়ী হয়েছিল স্পেন। এর আগে আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচে সাত গোল হজম করেনি জর্জিয়া। কিন্তু সেগুলো এখন অতীত।
এ পর্যন্ত ইউরোতে জর্জিয়া যেভাবে গতিময় ফুটবল দিয়ে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে এসেছে তাতে তাদের নিয়ে আশা করাই যায়। পেনাল্টি শ্যুটআউটে প্লেÑঅফে গ্রীসকে পরাজিত করে প্রথমবারের মত বড় টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বে খেলতে আসা উইলি সাগনোলের দল এখন টুর্ণামেন্টে ডার্ক হর্স হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশেষ করে পর্তুগালের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ের নায়ক নাপোলির তারকা উইঙ্গার কাভিচচা কাভারাটসখেলিয়ার উজ্জীবিত পারফরমেন্স সকলের নজড় কেড়েছে। সতীর্থ জর্জেস মিকাওটাডে তো তিন গোল করে আসরের গোল্ডেন বুটের দৌড়ে শীর্ষে রয়েছে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে তার পেনাল্টির গোলে জর্জিয়া পর্তুগালকে হারনোর পাশাপাশি নক আউট পর্বের টিকেট পায়। গোলবারের নীচে গিওর্গি মামাডাশভিলি দারুনভাবে নিজেকে প্রমান করে চলেছেন।
২০১৬ সালে এক প্রীতি ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে একমাত্র জয় পেয়েছিল জর্জিয়া, যা এখন সুদূর অতীত। কিন্তু এখন লা রোজাদের বিপক্ষে নিজেদের গতিময়তা প্রমান করতে পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে যেকোন দলকেই দেখা যেতে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
ম্যানচেস্টার সিটি মিডফিল্ডার রড্রি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে স্পেন দলে ফিরেছেন। আলবেনিয়ার বিপক্ষে বিশ্রামের পর যে কারনে ডি লা ফুয়েন্তে তার সেরা একাদশ নিয়েই কাল মাঠে নামতে যাচ্ছেন। সেন্টার-ব্যাক নাচো ও ফরোয়ার্ড আয়োজে পেরেজ উভয়ই ফিটনেস পরীক্ষা শেষে দলে ফেরার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তবে শেষ ম্যাচে তোরেসের একমাত্র গোলের যোগানদাতা প্লেমেকার ডানি ওলমো কাল বাদ পড়তে পারেন। আক্রমনভাগে আলভারো মোরাতার সাথে নিশ্চিতভাবেই ফিরছেন দুই তরুণ তুর্কি লামিন ইয়ামাল ও নিকো উইলিয়ামস।