দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব- বিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী একের পর এক বিষধর সাপ ধরে চঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক শ্রীপতি সিকদার গতকাল সোমবার রাতে তার নিজস্ব ওয়েব-সাইটে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তার কাছে এ বিষয় জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, হাবিপ্রবির ভেটেনারি বিভাগের এম এস অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী কামরুন নাহার কণা যে কোনো জায়গা থেকে সাপ উদ্ধার করতে পারেন। তিনি জানান, বিশ্ব- বিদ্যালয় এলাকায় হঠাৎ করে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব- বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা কিছুটা ভয়ে ও শঙ্কায় পড়ে যায়। বিষয়টি ওই শিক্ষার্থী কনা আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব স্থানে সাপের উপদ্রব লক্ষ্য করা গেছে, সেখান থেকেই সকলের উপস্থিতিতে সাহসিকতার সাথে বিষধর সাপগুলো ধরে তার নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। তার ধরা সাপগুলো কোন আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে কিনা? সে বিষয়টি দেখ-ভাল করে ধৃত সাপকে পরিচর্যায় সুস্থ করে তোলে। পরে তার ধরা সাপ গুলোকে নিরাপদ দূরে ও মুক্ত করে দেয়।
তার সাপ ধরার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় আশ-পাশে এলাকাগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে। ফলে কোথাও এ ধরনের সাপের উপদ্রব দেখা দিলে শিক্ষার্থী কনাকে খবর দিয়ে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কণা সফল ভাবে সেখান থেকে সাপ ধরে তার আয়ত্ত নিয়ে আসে। এভাবেই এই শিক্ষার্থী এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্প কন্যা হিসেবে সবার মুখে মুখে পরিচিতি পেয়েছে।
দিনাজপুর হাবিপ্রবির ভেটেনারি বিভাগের অধ্যাপক ড, হারুনুর রশি হারুন জানান, বেশ কিছুদিন থেকে এ শিক্ষার্থী কামরুনা হার কনা সাপ নিয়ে গবেষণা এবং এম এস অধ্যায়ন করছেন। তার উৎসাহ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষধর সাপ সাহসিকতার সাথে ধরে, পরিচর্যা করে আবার নিরাপদ জায়গায় ছেড়ে দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। সাপ ধরতে বাসাবাড়ি, হল কিংবা মেস সব স্থানে সে যায়। তার কৌশলেই বিষধর সাপ ধরার পর সাহসিকতায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সফল হচ্ছে। বিষয়টি সে সাহসিকতা দিয়ে আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থী কনার সাথে বলা হলে সে জানায় , যে কোন স্থান থেকে সাপ ধরে উদ্ধার করার পর স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করান। তাঁদের অনুমতি ক্রমে সাপকে এক দিন পর্যবেক্ষণে রাখেন—কোথাও আঘাত পেয়েছে কি না, দেখার জন্য। অসুস্থ হলে সুস্থতা নিশ্চিত করে লোকালয় থেকে দূরে ছেড়ে দেন। এ কাজে তিনি এতটাই দক্ষতা অর্জন করেছেন যে ক্যাম্পাসে কোথাও সাপ দেখা গেলেও নাহারের ডাক পড়ে।
কনা বলেন, করোনার প্রকোপের সময় গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন কামরুন নাহার। তখন দেখতে পান, অন্য যেকোনো প্রাণীর চেয়ে মানুষ সাপের প্রতি নির্মম আচরণ করে বেশি। সাপ দেখলেই বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য হলেও নিষ্ঠুরতা দেখায়। কামরুন নাহারের খারাপ লাগত। তিনি ঠিক করেন, পরিবেশের জন্য উপকারী এ প্রাণী রক্ষায় কাজ করবেন। সেই থেকে তার সাপ ধরে রক্ষা করার কাজ শুরু হয়। গত ৩ বছরে সাপ নিয়ে কাজ করছেন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদের এম এস অধ্যায়নরত এ শিক্ষার্থী। এ পর্যন্ত শতাধিক সাপ উদ্ধার করেছেন। যার মধ্যে নির্বিষ ঘরগিন্নি, সুতানলি, জলঢোঁড়া থেকে শুরু করে বিষধর শঙ্খিনী, কালাচ, পাতিকালাচ, খৈয়াগোখরা, পদ্মগোখরাও রয়েছে। তবে নাহার সবচেয়ে বেশি উদ্ধার করেছেন শঙ্খিনী সাপ। কামরুন নাহার বলেন, ‘এটি নিশাচর। যতগুলো উদ্ধার করেছি, সব রাতের বেলায়। বেশ লাজুক ও শান্ত প্রকৃতির হয় এ সাপ। ভয় পেলে কু-লী পাকিয়ে বসে থাকে। এর কামড়ে মানুষ মারা যাওয়ার রেকর্ড বাংলাদেশে নেই।’
শিক্ষার্থীর বক্তব্য তিনি সাপের ক্ষতি চান না। সাপ একটি উপকারী প্রাণী হতে পারে। সাপকে আঘাত করলে সাপ মানুষকে দংশন করে বলে তার বিশ্বাস।