আগামী এক মাস কাউকে দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় না নামার অনুরোধ করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ অনুরোধ জানান তিনি।
নুরুল হক বলেন, ‘হঠাৎ করে প্রধান উপদেষ্টার বাসার সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে, চাকরি স্থায়িত্বের দাবি, এখানে-সেখানে বিক্ষোভ হচ্ছে। একটা সরকার আসার সাথে সাথে কেন এই বিক্ষোভ। আওয়ামী লীগের দোসররা তাদের উসকে দিচ্ছে। দাবি দাওয়ার প্রতি আমাদের সমর্থন আছে। কিন্তু আমাদের অনুরোধ-আগামী এক মাস কোনো আন্দোলন কইরেন না। সরকারকে স্থিতিশীল হতে দিন।’
চাঁদাবাজির অবসান করতে হবে জানিয়ে নুরুল হক বলেন, ‘একদল দখলদারদের আমরা হটিয়েছি। কিন্তু আরেক দল দখলদার টেকওভার নিচ্ছে। তাদের ঠেকাতে হবে। এক পয়সাও কোথাও চাঁদা দেবেন না। খাওয়া-খাওয়ির দিন শেষ।’
নুর আরও বলেন, ‘প্রবাসীরা দেশের বাইরে থেকে গণতন্ত্রের জন্য কথা বলতে গিয়ে, ফেসবুক স্ট্যাটাস দিতে গিয়ে যে পরিমাণ নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সেটা আমি দেখেছি। তাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমাকেও হ্যারাস হতে হয়েছে। প্রবাসী কমিউনিটির জন্য কীভাবে কাজ করা যায়, আসিফ নজরুল স্যার সেটা দেখবেন। দলবাজ, চাটুকার কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করতে হবে।’
বাংলাদেশে আন্দোলনের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্যালুট জানাই।’
নুর বলেন, ‘শেখ হাসিনা হিটলারকে ছাড়িয়ে গেছেন, ফেরাউন-নমরুদদেরও ছাড়িয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখছে। তারা রাস্তায় নামলে তাদের প্রতিহত করে পুলিশের হাতে দিতে হবে। সারা দেশে তাদের প্রতিহত করতে হবে।
সভায় গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা হলে, তারা আবার যদি কখনো ক্ষমতায় আসে, আমাদের প্রত্যেককে ফাঁসিতে ঝোলাবে। তাদের আর নির্বাচন করতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু সেই স্বাধীনতার সুখ আমরা উপভোগ করতে পারছি না। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই, এখনো লুটপাট চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্তর্বর্তী সরকারের কমান্ড মানছে না। যারা অসহযোগিতা করছে, তাদের অনতিবিলম্বে চাকরিচ্যুত করতে হবে। আমাদের অনেক ভাইয়েরা আছে, তারা চাকরি করবেন।’
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে ভারতের উদ্দেশে রাশেদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে ভারত থেকে ব্ল্যাক ক্যাপদের দেশে আনা হয়েছিল। শেখ হাসিনা কাদের এনেছিল, তার তদন্ত করতে হবে। শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে না দিলে ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও করতে হবে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তাদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে আমাদের কোনো লাভ নাই। আমরা মোদী সরকারকে বলব-আপনারা শেখ হাসিনা সরকারকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন, আপনারা দুঃখ প্রকাশ করুন, ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আমরা ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক চাই।’
রাশেদ তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সীমান্তে পাহারা বসান। আওয়ামী মন্ত্রী-এমপিরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে। ২১ আগস্টকে ঘিরে আরেকটি প্রতিবিপ্লবের ষড়যন্ত্র চলছে। আগামীকাল আমাদের সকলকে মাঠে থাকতে হবে।’
রাশেদ বলেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যম বন্ধ করা যাবে না। প্রয়োজনে তাদের নাম বদলান, মালিকানা বদলান, ম্যানেজমেন্ট বদলান। সময় টিভির নাম বদলাক, মালিকানা বদলাক, কিন্তু চ্যানেলটি যেন বন্ধ না হয়।’
সভায় মানবাধিকার কর্মী শামসুল আলম লিটন বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যে সব গায়েবি মামলা হয়েছে, সেগুলোর তালিকা আপনারা দেন। সে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের জন্য কাজ করতে হবে।’
সভায় গণ অধিকার পরিষদ এবং বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগ করা দলীয় সকল রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনারসহ সকল কর্মকর্তাদের অপসারণ করে মেধাবী ও প্রবাসী বান্ধব রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনার নিয়োগের দাবি জানান।