সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের (এমপি) জন্য বরাদ্দকৃত পাসপোর্টসহ সব কূটনৈতিক (লাল) পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিকিউরিটি সার্ভিস ডিভিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, সরকার ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়েছে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আদেশ জারি করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিকিউরিটি সার্ভিস ডিভিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যেই অভিবাসন ও পাসপোর্ট বিভাগকে (ডিআইপি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ডিআইপিও প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আশা করছি, শিগগিরই আদেশ জারি হবে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই সপ্তাহ পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরাও কূটনৈতিক পাসপোর্ট বহন করেন।সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্ট স্ট্যাটাস বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা যেহেতু প্রাথমিক ধারকদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করছি, তাদের পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্টও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
“যদি কেউ [কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী] একটি নতুন পাসপোর্ট নিতে চান, তারপর ব্যক্তিকে প্রথমে কূটনৈতিক বা লাল পাসপোর্ট সমর্পণ করতে হবে এবং তারপর আইন অনুযায়ী একটি সাধারণ পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে,” তিনি যোগ করেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, লাল পাসপোর্ট বাতিল হয়ে গেলে সাবেক মন্ত্রী-এমপি যাদের নামে ফৌজদারি মামলা রয়েছে বা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের সাধারণ পাসপোর্ট পেতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে আদালতের আদেশ পেলেই তারা সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের কর্মকর্তারাও লাল পাসপোর্ট পান। যাদের লাল পাসপোর্ট আছে তাদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য ভিসার প্রয়োজন নেই। তারা নিজ নিজ দেশে অবতরণের পর ভিসা অন অ্যারাইভাল পান। লাল পাসপোর্ট বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট সব দেশেই লাল।
একবার বাতিলের আদেশ জারি হলে, সাবেক এমপি বা মন্ত্রী যারা বর্তমানে বিদেশে আছেন তাদের লাল পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট দেশের ডিআইপি অফিসে বা বাংলাদেশে ফিরে আসার পর জমা দিতে হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাল পাসপোর্টধারী ছিলেন। তার সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেন হাসিনা।
ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-এমপিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগেই কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে যান। তবে পতনের পর কারও বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। অনেক প্রাক্তন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এখনও দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন, এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করছে কারণ তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দুই ডজনেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পাসপোর্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন সরকার গঠনের পর সংসদের মেয়াদের পাঁচ বছরের জন্য মন্ত্রী-এমপিরা কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) পান। সংসদের মেয়াদ শেষ হলে পাসপোর্টের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। ঢাকা শীঘ্রই জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ৩০ আগস্টের আগে স্বাক্ষর হতে পারে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বলপূর্বক গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আলম বলেন, শিগগিরই একজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে। গায়েবি মামলা খতিয়ে দেখতে কমিশন গঠনের আলোচনা চলছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করছিলেন প্রেস সচিব মো. আলম বলেন, সরকার যুক্তরাজ্যসহ পাচারকৃত অর্থও ফেরত আনতে চায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ ব্যাপারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সহযোগিতা চেয়েছেন। হাইকমিশনার বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। এর আগে ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও জাপানের রাষ্ট্রদূত পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাপানের আর্থিক সহায়তা কামনা করেন। তিনি উভয় রাষ্ট্রদূতকে জানান যে বাংলাদেশ একটি বড় পরিবার এবং এখানে কোনো শত্রুতা নেই এবং দেশে বৃহত্তর সম্প্রীতির ওপর জোর দেন। উভয় রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছিলেন যে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করতে প্রস্তুত রয়েছেন।