সাভারের আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিন পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় আশুলিয়া থানায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দুইটি দায়ের করেছেন নিহত দুই পুলিশ সদস্যের স্ত্রী।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে আশুলিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহত এএসআই মো. সোহেল রানার স্ত্রী মোছা. রেশমা পারভীন ও রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাব্বি আক্তার পৃথক দুইটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- ঢাকা জেলা ডিএসবি আশুলিয়া জোনের কর্মরত এএসআই সোহেল রানা ও এএসআই রাজু আহমেদ। এ ছাড়া রাজধানীর মালিবাগে স্পেশাল ব্রাঞ্চের এএসআই রফিকুল ইসলাম।
এএসআই মো. সোহেল রানার স্ত্রী মোছা. রেশমা পারভীনের মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সোহেল রানা দীর্ঘ প্রায় দুই বছর যাবত ঢাকা জেলার ডিএসবি আশুলিয়া জোনে কর্মরত ছিলেন। আশুলিয়া ডিএসবিতে কর্মরত থাকাবস্থায় গত ৫ আগস্ট সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি চলাকালে একদল অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারী দুপুর ২টার দিকে আশুলিয়া থানা ঘেরাও করার চেষ্টা করে। এ সময় সোহেল গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এরপর আশুলিয়া থানায় গিয়ে তথ্য প্রদান করে আশুলিয়া থানার পাশেই নিজ ভাড়া বাসায় ফিরেন। বিকেল ৪টার দিকে আশুলিয়া থানা ঘেরাও করলে নিরাপত্তার জন্য এএসআই মো. রাজু আহমেদ, কনস্টেবল নাজমুল হক, কনস্টেবল আতোয়ার হোসেন আশুলিয়া থানার পাশে সোহেলের ভাড়া বাড়িতে অবস্থান নেন। এ সময় দুষ্কৃতিকারীরা খবর পেয়ে ওই বাড়িতে হামলা চালায়।
১০০-১৫০ জন দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বাসার গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে সোহেল, রাজুসহ দুই কনস্টেবলকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। পরে দুষ্কৃতকারীরা পুলিশ সদস্যদের মৃত ভেবে সোহেলের মরদেহ টেনেহিঁচড়ে বাড়ির নিচে নামিয়ে চলে যায়। এ সময় দুই কনস্টেবলের জ্ঞান ফিরলে তারা ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সোহেলের বাড়িতে আবার দুষ্কৃতিকারীরা এসে এএসআই রাজুর মরদেহ টেনেহিঁচড়ে বাড়ির নিচে নামায় এবং সোহেলের মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর আবার এএসআই রাজু আহমেদের মরদেহ নিয়ে থানা সংলগ্ন নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ফুট ওভার ব্রিজের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। পরের দিন ৬ আগস্ট খোঁজখবর নিয়ে তাদের মরদেহের সন্ধান পায় পরিবার।
অন্যদিকে এএসআই রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাব্বি আক্তারের মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ৫ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল মসজিদ সংলগ্ন ওভার ব্রিজের নিচে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের অজ্ঞাত উত্তেজিত জনতা পুলিশ সদস্য রফিকুলের মোবাইল, ম্যানিব্যাগ চেক করে পুলিশ আইডিকার্ড পায়। তখন উত্তেজিত লোকজন এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মারে ও মুখের চেহারা বীভৎস করে হত্যা করে। পরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ফুট ওভার ব্রিজের সঙ্গে রফিকুলের মরদেহ ঝুলিয়ে রাখে। পরে ৬ আগস্ট ফেসবুকে রফিকুলের ঝুলন্ত ছবি দেখে পরিবারের সদস্যরা রফিকুলের সন্ধান পান।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশুলিয়ায় তিন পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে সবাইকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।