শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অনেক এমপি, রাজনীতিক এবং পুলিশের বর্তমান ও সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অনেকেই ইতোমধ্যে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারও হয়েছেন। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন বহুল আলোচিত সাবেক অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী সরকারের পতনের পর আব্দুল কাহার আকন্দ গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতেও আসেননি। এমনকি তিনি নিজের আত্মীয়স্বজন কারো বাসাতেই থাকছেন না। তার মোবাইল নম্বরও বন্ধ। তিনি দেশে আছেন না বিদেশ চলে গেছেন সেটিও জানা যায়নি। মূলত গত ৫ আগস্ট থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত চমকপ্রদ প্রার্থী ছিলেন আব্দুল কাহার আকন্দ। তার হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল দলটি। যদিও নির্বাচনে জিততে পারেননি তিনি। জানা গেছে, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের খুবই আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত ছিলেন।
তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের কাছে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত যুগ্ম-সচিব নিকুঞ্জ বিহারী নাথ হত্যা মামলা, মতিঝিলে ছিনতাইকারীর গুলিতে নিহত সার্জেন্ট আহাদ হত্যা মামলাসহ আলোচিত বহু মামলার তদন্ত করেছেন আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্বও পালন করেছেন। এছাড়া, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন এই কর্মকর্তা।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার বিষয়ে গত বছরের ২০ আগস্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনীতি করেছে। এ মামলার অভিযোগপত্রে আমার নাম ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের দলীয় লোক কাহার আকন্দকে তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। যিনি পুলিশের চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এমনকি ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন।
পৈত্রিক বাড়ি কিশোরগঞ্জে এক জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছিলেন, আমাদের সরকারের আমলে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্তে ইন্টারপোল, এফবিআইকে দেশে নিয়ে আসা, মুফতি হান্নানসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, সিআইডি, ডিবিসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করা, হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এসব কিছু প্রমাণ করে যে, প্রকৃত ঘটনা ও অপরাধীদের শনাক্ত করার বিষয়ে তৎকালীন বিএনপির সরকারের আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতার অভাব ছিল না। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশের কাহার আকন্দকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন অপরাধ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কাহার আকন্দ চাকুরিচ্যুত হন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় দীর্ঘ সাত বছর পর ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারি চাকরি ফিরে পান কাহার। তার একদিন পর অবসরে যান।
পরে ওই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি দুই বছরের চুক্তিতে নিয়োগ পেলেও এরপর চার দফায় তার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি অবসরের পরেও ১০ বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান, যা সর্বশেষ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হলে তিনি চূড়ান্ত অবসরে যান।
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেও হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। সে সময় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন পুলিশের এই সাবেক কর্মকর্তা।