অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে ৯৪ রানে এগিয়ে সফরকারী বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানের জবাবে ৫৬৫ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। এতে প্রথম ইনিংস থেকে ১১৭ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ১৯১ রানের নান্দনিক ইনিংস। বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দিন শেষে ১ উইকেটে ২৩ রান করেছে পাকিস্তান।
গতকাল তৃতীয় দিন শেষে ৫ উইকেটে ৩১৬ রান করেছিলো বাংলাদেশ। ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ১৩২ রানে পিছিয়ে ছিলো টাইগাররা। মুশফিক ৫৫ ও লিটন দাস ৫২ রানে অপরাজিত ছিলেন।
আজ দিনের নবম ওভারে পাকিস্তানের পেসার নাসিম শাহর বলে কাট করতে গিয়ে উইকেপের পেছনে ক্যাচ দেন লিটন। ৭৮ বল খেলে ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৬ রান করেন লিটন। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মুুশফিকের সাথে ১১৪ রান যোগ করেন লিটন।
লিটন ফেরার পর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন মুশফিক। ইনিংসের ১১৬তম ওভারে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম ও পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান মুশফিক। দুই সাবেক ব্যাটার হাবিবুল বাশার (১০৮) ও জাভেদ ওমর বেলিমের (১১৯ রান) পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে পাকিস্তানের মাটিতে সেঞ্চুরি করলেন মুশফিক।
ক্যারিয়ারের ৮৯তম ম্যাচে ১১তম সেঞ্চুরিতে দেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে ছাড়িয়ে গেছেন মুশফিক। ৭০ টেস্টে ১০টি সেঞ্চুরি আছে তামিমের। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১২টি সেঞ্চুরি আছে মোমিনুুল হকের।
১৩৭তম ওভারে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের রান টপকে বাংলাদেশকে লিড এনে দেন মুশফিক-মিরাজ। এই জুটিতে টেস্ট ক্যারিয়ারে পঞ্চমবারের মত দেড়শ রানে পা রাখেন মুশফিক। দেড়শ’র পর চতুর্থ ডাবল-সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন মুশফিক। কিন্তু ডাবল-সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ব্যক্তিগত ১৯১ রানে পেসার মোহাম্মদ আলির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুশফিক। তার ৩৪১ বলের ইনিংসে ২২টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। মোহাম্মদ আশরাফুলের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ১৯০’এর ঘরে থামলেন মুশি। আর বিশে^র ৬৫তম ব্যাটার হয়ে ১৯০ রানের ঘরে আউট হলেন মুশফিক।
সপ্তম উইকেটে ১৯৬ রানের জুটি গড়েন মুশফিক ও মিরাজ। মুশফিক ফেরার পর বাংলাদেশের লিড বাড়িয়েছেন মিরাজ ও শরিফুল ইসলাম। টেস্টে সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নবম ব্যাটার হিসেবে ৬টি চারে ৭৭ রানে আউট হন একবার জীবন পাওয়া মিরাজ।
পেসার নাসিম শাহর বলে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হবার আগে ২টি করে চার-ছক্কায় ১৪ বলে ২২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন শরিফুল। ৫৬৫ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে এটিই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস বাংলাদেশের। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান টাইগারদের।
বোলিংয়ে পাকিস্তানের নাসিম ৩টি, শাহিন শাহ আফ্রিদি-খুররাম শাহজাদ ও আলি ২টি করে উইকেট নেন।
১১৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে তৃতীয় ওভারেই হোচট খায় পাকিস্তান। মাত্র ১ রান করে বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার শরিফুলের বলে উইকেটরক্ষক লিটনকে ক্যাচ দেন ওপেনার সাইম আইয়ুব।
দ্বিতীয় উইকেটে ১৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিনের শেষ সময়টা ভালোভাবে পার করেছেন পাকিস্তানের আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও অধিনায়ক শান মাসুদ। শফিক ১২ ও মাসুদ ৯ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের শরিফুল ১৩ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : (চতুর্থ দিন শেষে)
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস : ৪৪৮/৬ ডি, ১১৩ ওভার (রিজওয়ান ১৭১*, শাকিল ১৪১, হাসান ২/৭০, শরিফুল ২/৭৭)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৫৬৫/১০, ১৬৭.৩ ওভার (মুশফিক ১৯১, সাদমান ৯৩, মিরাজ ৭৭, নাসিম ৩/৯৩)।
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস : ২৩/১, ১০ ওভার (শফিক ১২*, মাসুদ ৯*, শরিফুল ১/১৩)।