বাংলাদেশ সরকার রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ঋণ পরিশোধের সময় দুই বছর পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকার প্রায় ৮০ কোটি ডলার সাশ্রয় করতে পারবে এবং দেশের অর্থনীতির উপর বিদেশি ঋণের চাপ কিছুটা কমবে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, তারা আগের ঋণচুক্তি সংশোধনের কাজে এখন ব্যস্ত। ইতিমধ্যে একটি খসড়া চূড়ান্ত করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে পাঠিয়েছে ইআরডি।
সরকার হঠাৎ করে চীনের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনকেই মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে, এই ঋণ চীনা মুদ্রা ইউয়ানে নেওয়ার কথা ছিল।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। রূপপুর প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ পিছিয়ে দেওয়া এবং চীনের কাছ থেকে নতুন ঋণ নেওয়ার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গৃহীত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলি দেশের অর্থনীতির জন্য কী ধরনের প্রভাব ফেলবে তা সময়ই বলবে।
বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি রাশিয়ার এক্সিম ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের উপর নির্ভরশীল। যদিও প্রকল্পটি বাংলাদেশের শক্তি খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে, তবে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট জটিল আর্থিক পরিস্থিতি এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ড শেষে এই পরিশোধ শুরু হচ্ছে, যেখানে শুধুমাত্র সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল। ২০২৭ সালের ১৫ মার্চ থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নেওয়া ঋণের মূল কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে । আসল হলো নেওয়া ঋণের মূল পরিমাণ। সুদ হলো ঋণের উপর নির্দিষ্ট হারে পরিশোধ করতে হবে এমন অতিরিক্ত অর্থ। রূপপুর প্রকল্পের ক্ষেত্রে মোট আসল পরিশোধ ৩৯ কোটি ডলার এবং সুদ ১১ কোটি ডলার (প্রতি বছর)। তবে এই পরিমাণ সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে কারণ সুদের হার এবং কিস্তির পরিমাণ বিভিন্ন কারণে প্রভাবিত হতে পারে।
১ লক্ষ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকার এই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে উল্লেখযোগ্য বিলম্ব হওয়ায় প্রকল্পটির সমাপনী তারিখ ২০২৭ সালে স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সরকার এই প্রস্তাবে সম্পূর্ণ সম্মত না হওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। হয়তো তারা চীনের শর্তাবলীতে সন্তুষ্ট ছিল না, অথবা তারা অন্য কোনো দাতা সংস্থা থেকে আরও ভাল শর্তে ঋণ পেতে আশা করছিল। এই সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হবে তা এখনই বলা কঠিন।এই ঘটনা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
গত জুলাই মাসে যখন সদ্য ক্ষমতা হারানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেন, তখন দুই দেশ এ বিষয়ে একমত হতে পারেনি। ফলে ওই সফরের সময় কোনো চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়নি। পরে হাসিনা সরকারের পতন ঘটে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ ।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ইআরডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার দ্বিপক্ষীয় ঋণের প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে, চীনের সাথে গত এক বছর ধরে কোনো নতুন ঋণ চুক্তি না হওয়া এবং নতুন কোনো প্রতিশ্রুতি না পাওয়া সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আরও জোরালো করেছে। এই যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সরকার নিশ্চিত করতে চায় যে, নেওয়া হবে এমন যে কোনো ঋণ দেশের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী হবে না।