ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেছেন, সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে পুলিশ ঢাকা মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি আজ শনিবার রাজধানীর মিন্টোরোডস্থ ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে ‘কমিশনার’স মিট দ্য প্রেস’ এ নগরবাসীর উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিগত সময়ের উচ্চাভিলাষী ও অপেশাদার কিছু পুলিশ কর্মকর্তা সমগ্র বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এর ফলে ছাত্র-জনতার আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান এবং বিগত সরকারের পতনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছিল। অনেক পুলিশ সদস্য আহত এবং নিহত হয়েছেন। প্রাণভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। অনেক স্থানে আমাদের অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
ডিএমপিকে ঢেলে সাজানো হবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, বাহিনীর যারা অপেশাদার আচরণ করেছেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, ট্রাফিকের প্রায় সকল অফিস ও বক্স ভাঙচুর হয়েছে। ডিএমপির ৫০টি থানার মধ্যে ২২টি থানা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুণ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই চেষ্টা করছি যাতে, পুলিশ সদস্যরা ভয় না পেয়ে দ্রুত কাজে ফিরে আসেন। কিন্তু ইতোমধ্যে কিছু উচ্চাবিলাসী ও অপেশাদার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাদের ব্যাপক ক্ষোভ জন্মায় এবং নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কর্মবিরতি শুরু করে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আইজিপি, অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ আমি নিজে রাজারবাগ ও মিরপুর পুলিশ লাইন্সসহ বিভিন্ন পুলিশ স্থাপনায় যাই। তাদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করে কিছু দাবি তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়।
মাইনুল হাসান বলেন, পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগদানের ভীতি দূর করণও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি থানায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। তাদের উপস্থিতির ফলে পুলিশ সদস্যসহ জনমনে আস্থা ফিরে আসে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে থাকে। সেনাবাহিনীর সদস্যগণের সহায়তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সকল থানার কার্যক্রমসহ ট্রাফিক বিভাগ ও অন্যান্য সকল বিভাগের কার্যক্রম দ্রুততার সাথে সচল করতে সক্ষম হই। এজন্য সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানসহ সশস্ত্র বাহিনীর সকল স্তরের সদস্যদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সংকটকালে বিজিবি ও আনসার সদস্যগও সার্বিক সহযোগিতা করেছে। এর পাশাপাশি ছাত্র-জনতাসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পুলিশের মনোবল বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছেন। তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান ডিএমপি কমিশনার।
তিনি বলেন, ট্রাফিক জ্যাম ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা।এই সমস্যা সমাধানে একদিকে দরকার সমন্বিত পরিকল্পনা, কার্যকরী উদ্যোগ ও অন্যদিকে সকল নগরবাসীর অকুণ্ঠ সহযোগিতা ও সচেতনতা।
ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ১৯৭৬ সালে মাত্র ১২টি থানা ও ৬ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরবাসীর আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে বর্তমানে ৫০টি থানা ও ৩৪ হাজার জনবল নিয়ে নগরবাসীকে পুলিশী সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিশেষ কোনো জেলার সদস্যদের দিয়ে ডিএমপি পরিচালিত হবে না, ডিএমপি পরিচালিত হবে পেশাদার কর্মকর্তাদের দিয়ে।
ডিএমপি কমিশনার মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণ করে বলেন, আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দানকারী বীর শহীদদের। গণঅভুত্থ্যানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি একই সাথে স্মরণ করছি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদ ও আহত পুলিশ সদস্যদের।
এ সময় ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দসহ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।