সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র একাধিক চুক্তি নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন রিয়াদে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল রাটনি। এগুলো চূড়ান্ত হলে একটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী ইতিহাস সৃষ্টিকারী চুক্তি হবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। এই চুক্তির লক্ষ্য, মার্কিন-সৌদি কৌশলগত অংশীদারি এবং সামরিক চুক্তিগুলো শক্তিশালী করা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ, যা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি করবে। আল অ্যারাবিয়া আশারক আল-আওসাতের বরাত দিয়ে সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল রাটনি সৌদি প্যান-আরব প্রকাশনা আশারক আল-আওসাতকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘যদিও আমরা এই চুক্তির খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে খুব কাছাকাছি এসেছি ও আছি, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা সব কিছু একসঙ্গে চূড়ান্ত করব এবং এর মাধ্যমে আমাদের মধ্যে একটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী চুক্তি হবে।’
চুক্তিগুলোর প্যাকেজ চূড়ান্ত করার নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ না করলেও রাটনি ওয়াশিংটন ও রিয়াদ—উভয়ের ক্ষেক্ষে বলেন, ‘আমরা যদি আগামীকালই এটি করতে পারতাম। আমরা একটি জটিল অঞ্চলে আছি এবং চুক্তিটিও অনেক জটিলতায় ভরা। তবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব এটি সম্পন্ন করব।
মে মাসে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। সেখানে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের মধ্যে প্রায় ‘চূড়ান্ত’ চুক্তির একটি খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সৌদি প্রেস এজেন্সি তখন এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
উন্নত প্রতিরক্ষা সম্পর্ক
এই মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রি ফের শুরুর সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেছে, বিশেষত ইয়েমেনে যুদ্ধ প্রতিরোধ ও যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে সৌদি কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে সম্পর্ক উন্নত হওয়ার কারণে।আল অ্যারাবিয়া ইংলিশ আগে এই পদক্ষেপের কথা জানিয়েছিল, যেখানে বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছিল, এতে ‘উল্লেখযোগ্য’ অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা আল অ্যারাবিয়া ইংলিশকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সৌদি আরব এখনো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদার, বিশেষ করে যখন এই অঞ্চলে উচ্চ অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।’এদিকে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারি সম্প্রসারণের প্রচেষ্টার প্রতিফলন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন এসেছে, যা অঞ্চলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে প্রতিফলিত করে। রাটনি বলেন, ‘সৌদি আরব ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধ ও একটি শান্ত পরিস্থিতি বজায় রাখতে এবং যদি আবার সামরিক সংঘাত ঘটে তবে বেসামরিক ক্ষতি কমাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। পরিস্থিতি বদলেছে; অংশীদারি বেড়েছে এবং এর সঙ্গে আমাদের নিজস্ব পদ্ধতিতেও স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তন এসেছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরো উল্লেখ করেছেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মাঝে হুতিদের আক্রমণের ব্যাপক বৃদ্ধির ফলে একটি বিস্তৃত আঞ্চলিক সংঘাতের হুমকির মুখে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তার প্রতি ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে এডেন উপসাগর ও লোহিত সাগরে নিজেদের নৌ ও সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এটি করি, কারণ বিশ্বের এই অংশে জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা এবং সৌদি আরব ও এই পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
অভিন্ন চূড়ান্ত লক্ষ্য
রাটনির মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের চূড়ান্ত লক্ষ্য একই। সেটি হলো দ্বিরাষ্ট্র সমাধান তৈরি করা, যা ইসরায়েলের পাশে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে আসা উচিত, অন্য কোনো উপায়ে নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘এরই মধ্যে আমাদের গভীর অগ্রাধিকার হলো গাজায় সহিংসতা বন্ধ করা, গাজার জনগণের দুর্দশা বন্ধ করা, যুদ্ধবিরতির দিকে আমাদের প্রচেষ্টা এগিয়ে নেওয়া, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করা এবং এই সংঘাতের অবসান ঘটানো, যাতে গাজায় বহুপ্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো যায়।’
মার্কিন-সৌদি অর্থনৈতিক সম্পর্ক
এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার জন্য দেশটিতে বিনিয়োগের অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা অর্থনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা এখন সৌদি সরকার ও সৌদি কম্পানিগুলোর সঙ্গে এমন ক্ষেত্রে কাজ করছি, যা আগে কল্পনাও করতে পারতাম না, যেমন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মহাকাশ অন্বেষণ। সৌদি আরবের বাণিজ্যিক মহাকাশে বিশাল উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং আমরা কম্পানি হিসেবে তাদের সঙ্গে থাকতে চাই।’
রাটনি উল্লেখ করেছেন, তেল দিয়ে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারি এখন জীবাশ্ম জ্বালানির বাইরেও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রসারিত হচ্ছে। সৌদি আরবে তেলের বাইরে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের ওপরও তিনি আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো, উন্নত প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি সৌদি অর্থনীতি বাড়ছে ও বৈচিত্র্যময় হচ্ছে এবং নতুন মার্কিন কম্পানিগুলোকেও এই সুযোগগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।’