ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আরও ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
বুধবার (২৮ আগস্ট) জেলা সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের মৃত আব্দুল লতিফ মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া বাদী হয়ে তার ভাই জহিরুল ইসলামকে হত্যার অভিযোগে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ওবায়দুল মুক্তাদীর চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন কে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়াও এই মামলায়, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাক্তার মো. আবু সাঈদ, মাহবুবুল আলম খোকন, শফিউল আলম লিটন, মাহবুবুল বারি চৌধুরী মন্টু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সাবেক সাংসদ মইন উদ্দিন মইন, এহতেশামুল বারি তানজিল, তানজিল আহমেদ, হাজী শফিউল্লাহ মিয়া, হানিফ মুন্সি, শাহানুর ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস, ভিপি হাসান, রাফি, নাসিমা মুকাই আলী, রফিকুল ইসলাম, আল আমন সওদাগর, আমজাদ হোসেন রনি, সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিল্লাল মিয়া, গোলাম মহিউদ্দিন স্বপন, সমর ভৌমিক, শাকিল, এডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু, সদ্য সাবেক সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শের আলম, মাহবুব আলম, মাসুম বিল্লাহ, সদ্য সাবেক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন শোভন, জুয়েল, সাইফুদ্দিন, লিমন খান, স্বাধীন, ফজলু মেম্বার, তাজুল ইসলাম চেয়ারম্যান, ভি পি জায়েদুল হক, রাকিব আহমদ সোহেল, ইসতিয়াক আহমেদ দুলাল, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, মোবারক হোসেন, তানভীর হায়দার, আশরাফ, বিল্লাল আহমেদ, সুজন দত্ত, অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার, মামুন আলি, আজম জসীম উদ্দিন রানা, মিজানুর রহমান আনসারী, মাসুদুর রহমান, রহিম উদ্দিন আজিজুল হক।
মামলার বাদী বাবুল মিয়া এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের মার্চের ২৬ তারিখ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে হেফাজতে ইসলাম আগমনের বিরোধিতা করে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। এ সময় তার ভাই জহিরুল ইসলাম এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র, আ, ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এর নির্দেশে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মী ও অন্যান্য আসামিদের নিয়ে বৈঠক করে আন্দোলনকারীদের প্রতিহতের উদ্দেশ্যে সকল আসামিরা জেলার আন্দোলনকারীদের ওপর বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
আন্দোলনকারীরা ও তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনকারীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঘটনাস্থলে আসা মাত্রই আসামিরা হত্যা করার উদ্দেশ্যে নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করে। তাদের ছোড়া অসংখ্য গুলি ও ককটেল এর এর আঘাতে জহিরুল ইসলামের শরীরে বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সে মৃত্যুবরণ করেন। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত না করেই লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। পরে আমিও আমার লোকজন আমার ভাই জহিরুল ইসলামের লাশ এলাকায় নিয়ে দাফন সম্পন্ন করে ফেলি। পরবর্তীতে থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নিয়ে আমাকে মামলা করা যাবে না মামলা করলে আমাকে প্রাণে শেষ করে দিবে বলে হুমকি দেয়। তৎকালীন সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, বাদীর একটি এজাহার আমরা মামলা হিসেবে নিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।