এবার টানা ১৫ বছর পর ভিন্ন পরিসরে চট্টগ্রামে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে। পৃথকভাবে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা স্ব স্ব সাংগঠনিক এলাকায় ভিন্ন পরিসরে পালন করবে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। একইভাবে ২০১২ সালের পর রাঙ্গুনিয়ায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের জন্যও কর্মসূচি রয়েছে। তবে টানা চার দিনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন পৃথক কর্মসূচি পালন হবে চট্টগ্রামে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হলেও বিগত সময়ে সরকারি দলের বাধায় সংক্ষিপ্ত পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে হয়েছে। ২০১২ সালের পর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতে যেতে পারেনি। গত ১৫ বছরে নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনেই সীমাবদ্ধ ছিল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন। উত্তর-দক্ষিণেও ছিল নানা শংকায় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচি। সবমিলে মামলা, হামলা, নির্যাতনসহ নানা শঙ্কা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করলেও বর্ণাঢ্য এবং বিনোদনমূলক কোনো অনুষ্ঠান রাখেনি। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ফেনী জেলা, মিসরাই, সীতাকুন্ড ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির শীর্ষ নেতারা কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে নিশ্চিত করেছেন।
আগামী রবিবার বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটি উদযাপনে চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। উত্তর জেলা বিএনপি এক দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। উত্তর জেলার অধিকাংশ উপজেলা বন্যাকবলিত হওয়ায় ত্রাণ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এক দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে হাটহাজারী উপজেলায় গণ-দোয়া হবে। এর আগেও ১৫ আগস্টের দিনও সেই গণ-দোয়া পালন করেছি। এর সাথে বহু বছর যেতে পারিনি শহীদ জিয়ার মাজারে। এবার বিশাল বহর নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে এবং তিন সাংগঠনিক কমিটিও পৃথক কর্মসূচি পালন করছে চট্টগ্রামে। তবে বন্যার কারণে এটা ভিন্নভাবে পালন করা হবে বলে জানান তিনি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বেলা ১১টায় নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে রাঙ্গুনিয়ায় শহীদ জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা, ফাতিহা পাঠ, দোয়া মাহফিল ও শ্রদ্ধা জানানো হবে। পরদিন রোববার বিকেল ৩টায় কাজীর দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ ছাড়া সকালে দলীয় কার্যালয়সহ ৪৩টি ওয়ার্ড কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং মাইকে শহীদ জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণ প্রচার। ১ সেপ্টেম্বর আনন্দ শোভাযাত্রা করবে দক্ষিণ জেলা বিএনপি। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় নাসিমন ভবনের সামনে থেকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্নাঢ্যে র্যালি শুরু হবে এবং বিপ্লব উদ্যানে শ্রদ্ধা নিবেদন, ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বাদ আসর দলীয় কার্যালয়সংলগ্ন জামে মসজিদে বিগত ১৫ বছরে আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত ও সাম্প্রতিক বন্যায় হতাহতদের জন্য দোয়া মাহফিল। ও ওইদিন আলোচনাসভা ও মাছের পোনা অবমুক্তকরণ এবং ৪ সেপ্টেম্বর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, আমার সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। তাই আমরা এক দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে আমাদের দলীয় কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হয়নি, নানাভাবে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। এবার আমরা চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। ফেনী ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা বন্যাকবলিত হওয়ায় কর্মসূচি কমিয়ে আনা হয়েছে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির শীর্ষ এক নেতা বলেন, শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনাসভা, মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, বৃক্ষরোপণসহ চার দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তবে বন্যার কারণে বর্ণাঢ্য বা বিনোদনমূলক কোনো অনুষ্ঠান থাকছে না।