বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ দফা দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিকেল ৫টায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. খন্দকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীমসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ এবং প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়াগুলো লিখিত আকারে উপস্থাপন করেন এবং দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চালু করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ ও পিএইচডি ডরমেটরি আগামী ৩১ আগস্ট থেকে খুলে দিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সব ধরনের দলীয় ও ছায়াসংগঠনভিত্তিক রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহের সকল সিদ্ধান্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে গ্রহণ করতে হবে, সব অনুষদে শিক্ষা এবং গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ডিন কাউন্সিল কর্তৃক সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং অতিদ্রুত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন দিতে হবে, বিগত স্বৈরাচার সরকারের যারা দোসর ছিল তাদের গণতদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোন প্রকার হয়রানিমূলক আচরণ করা যাবে না, প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের কোন দলীয় পরিচয় থাকা যাবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নারী নিরাপত্তা ও নিপীড়ন বিরোধী সেল গঠন করতে হবে এবং কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব র্যাগিং, গেস্টরুম, চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য নিষিদ্ধ করতে হবে; বাকৃবিকে সেশনজট মুক্ত করতে দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আলোচনা শেষে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিতে সম্মত হয় এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবি যৌক্তিক এবং প্রশাসন তাদের দাবির সঙ্গে একমত। আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যেই সব দাবি মেনে নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের যে কোনো সমস্যায় সরাসরি আমার কাছে চলে আসতে পারবে।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গতকাল (২৮ আগস্ট) রাত ১১ টায় সকল ধরনের রাজনীতি বন্ধ করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে ১১ দফা দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে শিক্ষার্থীরা, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তারা।