ভয়াবহ বন্যায় ডায়রিয়া, ইনফেকশন, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে কুমিল্লায়। এসব রোগে জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় এখন পর্যন্ত ২০ জনের প্রাণ গেছে।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কার্যালয় জানিয়েছে, বন্যার প্রভাবে ডায়রিয়া, রেসপাইরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (আরটিআই), চর্ম, চোখের প্রদাহ, সাপে কাটাসহ মানুষ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী আসছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে বন্যা কবলিত ১৪টি উপজেলার মানুষের মাঝে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এসব উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন মনোহরগঞ্জ উপজেলার মানুষ। এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ২৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া উপজেলাটিতে এখন পর্যন্ত দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চারজনের মৃত্যু হয়েছে লাকসামে।
এরপরই ভয়াবহ অবস্থা বুড়িচং উপজেলার। বুড়িচংয়ে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১৩৩ জন পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বুড়িচং উপজেলায় এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে সদর দক্ষিণ উপজেলায় ১৩ জন, চৌদ্দগ্রামে ২১৩ জন, দেবিদ্বারে ৭ জন, নাঙ্গলকোটে ১ হাজার ২৮০জন, বুড়িচংয়ে ২ হাজার ১৩৩ জন, চান্দিনায় ১৫ জন, লাকসামে ১৫৬ জন, মেঘনায় ৩৫ জন, তিতাসে ৪৪৪ জন, বরুড়ায় ১১ জন, আদর্শ সদরে ২৯ জন, ব্রাহ্মণপাড়ায় ১১১ জন এবং লালমাই উপজেলায় ২৪৮ জন রোগী আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেলায় এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে চৌদ্দগ্রামে তিনজন, মুরাদনগরে দুইজন, নাঙ্গলকোটে তিনজন, বুড়িচংয়ে তিনজন, লাকসামে চারজন, তিতাসে দুইজন, ব্রাহ্মণপাড়ায় একজন এবং মনোহরগঞ্জে দুইজন নিহত হয়েছেন।
এখন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৬৮ জন সাপের ছোবল খাওয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগ সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি গেলেও মুরাদনগরে সর্প দংশনের পর দেরি করে হাসপাতালে আসায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় জেলা জুড়ে এটিই একমাত্র সাপের ছোবলে মৃত্যু।
গত তিন দিনে (বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার) জেলায় মোট ২৭২ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। এছাড়া ২১ জন সাপের ছোবলে আক্রান্ত রোগী, ২ হাজার ৬৭ জন চর্ম রোগী, ৭৪ জন রেসপাইরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (আরটিআই) এবং ৬ হাজার ১৩৫ জন অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
জেলা সিভিল সার্জন নাসিমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যার পানিতে পানিবাহিত রোগ ভাসছে। এসব পানিবাহিত রোগের ফলে আক্রান্ত হচ্ছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। আক্রান্তদের কালক্ষেপণ না করে হাসপাতালে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। জেলায় মোট ২০৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। কোনো ওষুধেরই অপ্রতুলতা নেই। আমরা সব মানুষকে সমানভাবে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে বদ্ধ পরিকর।