বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে চোখ হারাতে বসেছেন বরিশাল সদর উপজেলার কর্নকাঠি গ্রামের এসএম রহমাতুল্লাহ সাব্বির। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।
স্বৈরাচার সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট বিকেলে নগরীর সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছোড়া তিনটি ছররা গুলিবিদ্ধ হয় সাব্বিরের বাম চোখে।
ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে দুটি গুলি অপসারণ করা হয়েছে। বাকি একটি গুলি অপসারণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে চোখ হারানোর শঙ্কা বিরাজ করছে সাব্বিরের পরিবারে।
এসএম রহমাতুল্লাহ সাব্বির চরকাউয়া ইউনিয়নের কর্নকাঠি সরদারবাড়ি মাদ্রাসা পাড়ার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান সরদারের ছেলে। বিএম কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে বর্তমানে বরিশাল ল’ কলেজে অধ্যয়নরত তিনি।
সাব্বিরের বড় ভাই নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ২০১৮ সাল থেকে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ছোট ভাই এসএম রহমাতুল্লাহ সাব্বির। এবারের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই বিএম কলেজের সমন্বয়ক হিসেবে রাজপথে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আন্দোলন করতে গিয়ে প্রশাসনিক ও আন্দোলন বিরোধীদের চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। কিন্তু এরপরও পিছপা হয়নি সাব্বির।
তিনি বলেন, গত ৪ আগস্ট দিনভর নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সাব্বির। সেদিন বিকেলে ছাত্রদের আন্দোলন দমন করতে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্রদলের উদ্দেশ্যে গুলি করে। এ সময় তিনটি ছররা গুলি সাব্বিরের বাম চোখে বিদ্ধ হয়।
সাব্বিরের বড় ভাই আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাব্বিরকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ওইদিনই তাকে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। সাব্বিরকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল আমাদের।
নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ঢাকায় যাওয়ার পথে জাজিরা এলাকায় আমাদের অ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করে একদল অস্ত্রধারী। তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে রোগী এবং আমাদের পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেওয়া মাত্রই তারা আমার বুকে অস্ত্র ধরে গালমন্দ এবং হুমকি দেয়। মনে হয়েছিল আমাকে তারা গুলিই করে দিবে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বেঁচে গিয়েছি। একদল সেনাবাহিনী এসে পড়ায় তাদের সহযোগিতায় সাব্বিরকে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ৪ আগস্ট আগারগাঁও হাসপাতালে ভর্তি করার পর দুদিন সাব্বিরের চিকিৎসা করেনি চিকিৎসকরা। কেউ খোঁজখবরও নিতে আসেনি। চার দিন পর সরকারি খরচে আমার ভাইয়ের চোখের অস্ত্রোপচার হয়। তখন দুটি গুলি অপসারণ করা সম্ভব হলেও একটি ভেতরে থেকে যায়। সাব্বির বর্তমানে বরিশালে কর্নকাঠির গ্রামের বাড়িতে আছে। দুই সপ্তাহ পর অপর গুলিটি অপসারণের জন্য আবার তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে ওই গুলিটি আদৌ অপসারণ সম্ভব কিনা আমরা জানি না। অপসারণ না করা গেলে সাব্বিরের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
সাব্বিরের বড় ভাই বলেন, সাব্বির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতেই ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। সেই খবরে চোখে ব্যান্ডেজ নিয়েই হুইলচেয়ারে বসে ঢাকার রাজপথে বিজয় আনন্দে অংশগ্রহণ করে সাব্বির। বর্তমানে সে গ্রামের বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছে। বিএনপি এবং ছাত্র আন্দোলনের অনেক নেতাকর্মী আমাদের বাড়িতে এসে সাব্বিরের খোঁজখবর নিয়েছে। তা ছাড়া ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ অন্য সমন্বয়করা হাসপাতালে সাব্বিরের খোঁজখবর নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনে অংশ নিয়ে চোখ হারাতে বসেছে সাব্বির। ওর সংসার আছে। ভবিষ্যৎ দিন কিভাবে কাটবে জানি না। তবে আমরা কোনো আর্থিক সহায়তা চাচ্ছি না। চাচ্ছি সাব্বির যেন ভালো একটা চাকরি পায়। ইতোপূর্বে পুলিশের এসআই পদে আবেদন করে সব ধাপেই টিকে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ রিপোর্টের কারণে তার চাকরিটা আর হয়নি। এ ছাড়া শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সাব্বির। এখন রেজাল্টের অপেক্ষায় আছে। আমরা কোটায় নয়, মেধা অনুযায়ী সাব্বিরের একটি কর্মসংস্থানের দাবি জানাই।