জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকদের থেকে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে এবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন শিক্ষকরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় সিনিয়র অধ্যাপক থাকতে বাইরে থেকে উপাচার্য কেন- এমন প্রশ্ন তুলেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় শিক্ষক লাউঞ্জে শিক্ষকদের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময়কালে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন আধিপত্য বিস্তারের জন্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে কলোনির মধ্যে রাখতে বারবার ঢাবির শিক্ষকদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা কোনোদিনই এ ক্যাম্পাসকে নিজের বলে চিন্তা করে না। অথচ আমাদের শিক্ষকরাই আমাদের সম্পর্কে বেশি অবগত।
তাঁরা আরও বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৮ জন গ্রেড-১ এর অধ্যাপকসহ মোট ১৫৬ জন অধ্যাপক রয়েছেন। তাদের মধ্যে সৎ, যোগ্য ও ন্যায়পরায়ণ শিক্ষককেই আমরা উপাচার্য চাই।আমাদের প্রশ্ন হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র অধ্যাপক থাকতে কেন বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য আসবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জহুরুল ইসলাম বলেন, যিনি বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে উপাচার্য আসেন, তিনি কখনোই জবিকে নিজের মনে করতে পারেন না। তারা নিজেদের সাঁজ-সরঞ্জাম গোছাতে ব্যস্ত থাকেন। তিনি নিজের মতো করে আরেকটা বলয় তৈরি করেন। নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করেন।
উপপরীক্ষক নিয়ন্ত্রক আব্দুল হালিম বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেসে থাকেন। নিজের আয়ে নিজ খরচ চালান। পরীক্ষক নিয়ন্ত্রক দপ্তরে কাজের সুবাদে মনে হয় এখানে পরীক্ষার নম্বরে সংস্কার প্রয়োজন। অ্যাসেসমেন্টের মান ৩০ থেকে ৪০ করা প্রয়োজন। আমাদের ক্যাম্পাসে এ গ্রেডের ৩৮ জন সিনিয়র অধ্যাপক রয়েছেন। তাহলে কেন তাদের বাদ দিয়ে কেন বাহির থেকে উপাচার্য আসবেন?
এ ছাড়া সভাপতিত্বের বক্তব্যে ড. মোস্তফা হাসান বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত উপাচার্য নিয়োগ না হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। অতীতকে ভুলে নয়, বরং অতীত থেকেই শিক্ষা নিয়েই চলবো। জবি থেকে ভিসি নিয়োগ হলে ক্যাম্পাসের অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। আমরা আমাদের দাবি জানাতে পারব।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মেজবাহ-উল-সওদাগর বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যিনি উপাচার্য হিসেবে আসবেন, তাকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনকানুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসতে হবে। আইনের আলোকে চলতে হবে। বিভিন্ন অসংগতি দূর করতে প্রয়োজনে আইন সংস্কার করতে হবে।
ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,শিক্ষার্থী কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সবাই আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। সকলের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলতে হবে। আর এই কাজে উপাচার্য হিসেবে নেতৃত্ব দিবেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন শিক্ষক। জবির বাইরে থেকে কোন উপাচার্য আসলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার মেনে নেবে না। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান সাদী, অধ্যাপক ড. আবু লায়েক, ওমর ফারুক ও সালেহউদ্দিন।
এ ছাড়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থ দপ্তরের ফান্ড এন্ড বাজেটের উপপরিচালক খন্দকার হাবিবুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান, ইব্রাহিম মিয়াসহ অন্যান্যরা। এছাড়া সভায় উপস্থিত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জাহিদুর রহমান, ডেপুটি ডিরেক্টর ফাইন্যান্স সৈয়দ আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।