ফুটবলের মহাকাশে এক তারকা নিভে যাচ্ছে। উরুগুয়ের কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড লুইস সুয়ারেজ আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। ৩৭ বছর বয়সী এই তারকা ফুটবলার তার দেশের জার্সিতে শেষবারের মতো মাঠে নামবেন আগামী শুক্রবার, প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে।
আবেগঘন বিদায়: সংবাদ সম্মেলনে সুয়ারেজের কণ্ঠে ছিল আবেগের ছাপ। তিনি বলেছেন, “শুক্রবারই দেশের হয়ে আমি শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া কখনই সহজ নয়। বেশ কিছুদিন এ বিষয়ে চিন্তা করেছি। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের জার্সিতে সর্বোচ্চ দেবার চেস্টা করবো।”
এক যুগের শেষ: বার্সেলোনা ও লিভারপুলের সাবেক এই স্ট্রাইকার তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে পরিচিত। জাতীয় দলের হয়ে ১৪২ ম্যাচে ৬৯ গোল করেছেন তিনি। ২০০৭ সালে উরুগুয়ের জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়েছিল। ২০১৪ বিশ্বকাপে ইতালির গিওর্গিও চিয়েলিনিকে কামড় দিয়ে চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়া তার ক্যারিয়ারের একটি কালো অধ্যায় হলেও, তিনি নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছেন।
কোপা আমেরিকার রাজা: ২০১১ কোপা আমেরিকা জয়ী উরুগুয়ে দলের সদস্য ছিলেন সুয়ারেজ। সেই টুর্নামেন্টে তিনি সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছিলেন। নয়টি বড় টুর্নামেন্টে তিনি দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
বিশ্বকাপের বিতর্ক:
২০১০ বিশ্বকাপ: ঘানার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে গোল-লাইনের উপর থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ইচ্ছাকৃত হ্যান্ডবল করে তিনি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। যদিও ঘানা পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় এবং উরুগুয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায়, তবুও সুয়ারেজের এই কাজের জন্য তাকে তীব্র সমালোচনা করা হয়।
২০১৪ বিশ্ব্বকাপ: ইতালির ডিফেন্ডার জিওর্জিও চিয়েলিনিকে কামড় দেওয়ার ঘটনায় তাকে টুর্নামেন্ট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। এই ঘটনা তার ক্যারিয়ারের একটি কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
ক্লাব ফুটবলে বিতর্ক:
বর্ণবাদী মন্তব্য: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফরাসি স্ট্রাইকার প্যাট্রিস ইভরার বিরুদ্ধে বর্ণবাদী মন্তব্য করার অভিযোগে তাকে ইংলিশ কর্তৃপক্ষ আট ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করে।
উরুগুয়ের জন্য অবদান:
এই সকল বিতর্ক সত্ত্বেও সুয়ারেজ উরুগুয়ের জাতীয় দলের জন্য অবিশ্বাস্য অবদান রেখেছেন। ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব এবং এ বছরের কোপা আমেরিকায় তার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। যদিও বিয়েসলার অধীনে তিনি বেশিরভাগ সময় বদলী হিসেবে মাঠে নেমেছেন, তবুও তার অভিজ্ঞতা দলের জন্য অমূল্য সম্পদ ছিল।
এক নতুন অধ্যায়: ইন্টার মিয়ামির এই ফরোয়ার্ডের জন্য এটি একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু। ফুটবলের মাঠ থেকে দূরে সরে গিয়েও, তিনি নিশ্চয়ই এই খেলার সাথে জড়িত থাকবেন।
বিদায় বলে দিতে চাই: সুয়ারেজ, আপনার দারুণ ফুটবল জীবনের জন্য ধন্যবাদ। আপনি আমাদের মনে চিরদিন থাকবেন।