পাকিস্তানের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জয়—স্বপ্নের চেয়েও বড় অর্জন। অথচ দারুণ এই সাফল্যের পরও আলোচনায় জাতীয় দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ভবিষ্যৎ। মূলত বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, সেখানে কোচ হাথুরুকে চাচ্ছেন না বিসিবি নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদ। দায়িত্ব গ্রহণের পর দুবার সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি সামনে এনেছিলেন তিনি।
তবে পাকিস্তানের মাটিতে এমন ঐতিহাসিক সিরিজ জয়; সেটার আবার টেস্ট ক্রিকেটে—এখন কী নতুন করে ভাববেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ! যদিও সাবেক ক্রিকেটার আফতাব আহমেদ থেকে শুরু করে ক্রিকেট ব্যক্তিত্বরা মনে করছেন, এখনই হাথুরুকে বিদায় করা ঠিক হবে না।
২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন হাথুরু। ২০২৩ সালে আবারও দুই বছরের চুক্তিতে এই লঙ্কান কোচকে নিয়োগ করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ আছে তার। বড় বড় অর্জনগুলোতে মিশে আছে তার নাম। কিন্তু প্রথম মেয়াদেও চুক্তি সম্পন্ন করতে পারেননি। এবারও কি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে—সে প্রশ্ন চাউর হচ্ছে ক্রিকেটাঙ্গনে। তবে এমন কিছু করা ঠিক হবে না জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আফতাব লিখেছেন, ‘আপনি কি এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না যে, হাথুরু একজন ভালো কোচ কি না?’
দলের ভেতর ব্যক্তি হাথুরুর কর্তৃত্ব কিংবা একক আধিপত্যে দ্বিমত থাকলেও কোচ হিসেবে যোগ্য নয় মানতে নারাজ তিনি। ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি জেতা আর টেস্ট জয় এক নয় জানিয়ে সাবেক এই ব্যাটার বলেন, ‘আপনি টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে জিততে পারেন। কিন্তু কোয়ালিটি না থাকলে আপনি টেস্ট জিততে পারবেন না। কারণ, এটা লম্বা সময়ের খেলা। ভালো পরিকল্পনা কিংবা নির্দেশনা ছাড়া জেতা সম্ভব নয়।’
পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট জেতার পেছনে হাথুরুর অবদান নেই—এমনটা ভাবছেন অনেকে। এর জন্য দেশিদের কৃতিত্ব দিতে চান তারা। তবে দেশের মাটিতে পাকিস্তান সফর ঘিরে যখন বাংলাদেশ টাইগার্সের ছায়াতলে প্রস্তুতি চলছিল; তখন দেশি কোচদের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের ঠিকই ইনপুট দিয়ে গেছেন হাথুরুসহ জাতীয় দলের অন্য কোচরা। দেশি কোচদের পরিশ্রম ও হাথুরুদের ইনপুট মিলিয়েই এমন সাফল্য—টাইগার্সের প্রধান কোচ সোহেল ইসলামের মুখেই শুনুন সেটা, ‘এই বিষয়টা (সাদা বল থেকে লাল বল) মাথায় রেখে ট্রেনিং প্রোগ্রামগুলো চালানো। এইখানে যারা জাতীয় দলের কোচ ছিলেন, তাদেরও কিছু ইনস্ট্রাকশন ছিল। সিলেক্টর যারা ছিল তাদেরও ইনস্ট্রাকশন ছিল। আমরা আসলে একটা অ্যালাইন ছিলাম কোচ, সিলেক্টর এবং আমরা যারা টাইগার্সের ছিলাম। আমরা আসলে কম্বাইন্ডলি করার চেষ্টা করছি।’
টেস্ট সিরিজ জেতার পেছনে কোচের ভূমিকা দেখছেন ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের বাংলাদেশ প্রতিনিধি আতিফ আজমও, ‘আমার মনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে কোচিংয়ের দক্ষতা প্রকাশ পেয়েছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে নতুন একজনকে কোচ করে আনা পুরো দলকে এলোমেলো করে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ, নতুন একজন কোচ হয়ে এসে বাংলাদেশ দলকে পরিবর্তন করে দেবে, এমনটাও ভাবা ঠিক হবে না।’ প্রথম মেয়াদের হাথুরু, স্টিভ রোডস, রাসেল ডমিঙ্গো কেউই মেয়াদপূর্ণ করতে পারেননি।
হাথুরুর দ্বিতীয় মেয়াদেও সেরকম কিছু দেখতেন চান না ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রে ক্রিকেটার সৌরভ গাঞ্জুলী ও কোচ রবি শাস্ত্রীকে অনেকেই উদাহরণ টানছেন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে পেশাদারিত্ব দেখিয়ে শাস্ত্রীকে রেখেছিলেন সৌরভ। বিসিবি সভাপতি ফারুকও এমন কিছু করবেন বলে বিশ্বাস তাদের।