গত ১৯ বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভবন ছাড়া আমাদের আর কোনো কিছু হয় নাই। আমাদের এই ক্যাম্পাস ও কেরানিগঞ্জের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস আমারা সাজিয়ে ফেলতে চাই। একই সাথে প্রশাসনকে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) বেলা ১১ টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ দাবি জানান।
এর আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বিশ্বিবদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে আবারও শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি ভিসি নিয়োগের পাঁয়তারা কেউ করেন তাহলে সেই তালবাহানা মেনে নেওয়া হবেনা। বাহিরের কোনো উপাচার্যকে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবেনা। যদি বাহিরের কাউকে জগন্নাথে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে তাকে অসম্মান না করে পুরান ঢাকার স্টার হোটেলে চা নাস্তা খাইয়ে বিদায় দেওয়া হবে।
ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক বলেন, আমরা যা করছি সেভাবে আমাদের দাবি পূরণ হবে না। আমাদের আন্দোলনের গতিবিধি পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে আন্দোলন করতে হবে। এখানে আমাদের ক্যাম্পাসের ভেতর আন্দোলন করলে আমাদের দাবি পূরণ হবে না।
ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মত বিলাল হোসাইন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে ভিসি পাবো। আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচির ফলে জগন্নাথ থেকে ভিসি পাওয়া যে আগ্রহ ছিল তা কমে যাচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যে ধারাবাহিক আন্দোলন করেছি সেটি কেন্দ্র পর্যন্ত পোঁছে গেছে। আমরা গণসাক্ষর কর্মসূচী করে জমা দিয়েছি। আমাদের আন্দোলন বৃথা যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। গত ১৯ বছরে আমরা দেখেছি একটি ভবন ছাড়া আর কোন কিছু হয় নাই। আমাদের এই ক্যাম্পাস ও দ্বিতীয় ক্যাম্পাস আমরা সাজিয়ে ফেলতে চাই। তাই আমাদের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য দরকার।
এ সময় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সেলিম বলেন, এর আগেও জবি থেকে উপাচার্য নিয়োগের দাবিটি উত্থাপিত হয়েছে, কিন্তু আমরা কোনো সাড়া পায়নি সরকারের পক্ষ থেকে। এবারের আন্দোলনটা একটু ভিন্ন পরিবেশ থেকে তৈরি হয়েছে এবং ভিন্নভাবে সংঘটিত হচ্ছে। এর আগে কেবলমাত্র দাবিতি উত্থাপিত হয়েছিল শিক্ষকদের পক্ষ থেকে। তবে এবার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা- কর্মচারীবৃন্দ সবার পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে। সুতরাং এবারের দাবি একটি সম্মিলিত দাবি।
বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. পরিমল বালা বলেন, আজ আমরা যে দাবিতে উপস্থিত হয়েছি, তাহলো এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হোক। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হলে তিনি তার দায়িত্ব শেষে আবার আমাদের মাঝেই ফিরে আসবেন। এক্ষেত্রে তার একটা জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি হয়।
সহকারী রেজিস্ট্রার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০০ শিক্ষক আছে। তার মধ্যে ১ম গ্রেডের শিক্ষক আছে ১৫০ জন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম গ্রেডের শিক্ষকেরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রফেসর হতে পারলে জগন্নাথে কেনো ভিসি হতে পারবেন না। আমাদের শিক্ষকেরা বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে জ্ঞান চর্চা করে ও বিতরণ করে। জগন্নাথ থেকে উপাচার্য না দেওয়া একটাই কারণ হলো, ঢাকার বুকে তারা আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠুক ওরা চায় না। তাই আমাদের একটাই দাবি জগন্নাথ থেকে উপাচার্য চাই।
সমাবেশে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, আমাদের এখানে বাহিরের ভিসি এসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লুটপাট করে চলে যায়, কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। যদি বাহির থেকে ভিসি আসে গেইটে তালা ঝুলবে, ক্যাম্পাস অচল করে দিবো। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা যেভাবে খুনি হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছি, তেমনি আমাদের দাবি আদায় করে ছাড়বো।
এ সময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেজবাহ ইল আজম সওদাগর, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ লোকমান হোসেন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু লায়েক, সহকারী রেজিস্ট্রার কামরুল হাসান সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীরা।