ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরবি বিভাগের ৩ অধ্যাপকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে তালা এবং দরজায় ব্যানার লাগিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ ঘোষণা দেয় তারা।
বহিষ্কার চাওয়া অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন, আরবি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ, অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মারুফ ও ড. বেলাল হোসাইন।
বাকি দুই অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল কাদির ও ড. জহিরুল ইসলাম প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাদের সব ক্লাস বয়কট করার দাবি করে অফিসের সামনে ব্যানার লাগায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, স্বৈরাচারী ও গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দালালদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে আমাদের অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছে। জুলাইয়ের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান ও গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পক্ষে অবলম্বন ছাড়াও ড. মোহাম্মদ ইউসুফের বিরুদ্ধে বিভাগের শিক্ষার্থীদের রয়েছে একগাদা অভিযোগ।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মারধর, ভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষককে ফাঁসানোর জন্য বোমা ষড়যন্ত্র, অর্থ আত্মসাৎসহ রয়েছে নানা অভিযোগ। সম্প্রতি ২০২৪ সালের ৯ জুন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস ও দ্য ডেইলি ইত্তেফাকের এক সংবাদে চেয়ারম্যান থাকাকালীন বিভাগের ২৬ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ ডিপার্টমেন্টের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাই। ফখরুদ্দিন স্যারকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ডিপার্টমেন্ট ছাড়া করা। জুবায়ের স্যারের রুমে বোমা রাখার ষড়যন্ত্র। ছাত্রলীগের পোলাপান নিয়ে মাহদী স্যারকে মারধর। ছাত্রলীগের পোলাপানদের নম্বর পক্ষপাতিত্ব। ২০১৫ সালে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে সায়েদ রহমানের চাকরিচ্যুত করেন তিনি।
আরবি বিভাগের শিক্ষক মাহাদী হাসান অভিযোগ করে জানান, ছাত্র থাকাকালীন সময়ে আওয়ামী সরকারের আমলে ড. মোহাম্মদ ইউসুফ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেদের দিয়ে তাকে ও তার এক বন্ধুকে মারধর করেছেন।
এ ছাড়াও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, তিনি ক্লাসের বিষয়ে খুবই গাফেল ও উদাসীন। কখনোই নিয়মিত ক্লাস নেন না। এক সেমিস্টারে সর্বোচ্চ দুই তিনটা ক্লাস নেন, তাও ২০-২৫ মিনিটের জন্য। তবে অ্যাটেনডেন্স শিট জমা দেওয়ার সময় শিটে ১০-১২টি ক্লাসে উল্লেখ করেন। তার বিরুদ্ধে নাম্বার কেলেঙ্কারির অভিযোগও করেছেন অনেকে। অনেক শিক্ষার্থী তার চারিত্রিক ব্যাপারেও অভিযোগ জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, গত রমজান মাসে তিনি একটি সুপার শপের সেলসগার্লসের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় হাতেনাতে ধরা পড়েন। বিষয়টি শাহবাগ থানা পর্যন্ত গড়ায়। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মাকসুদ কামালের হস্তক্ষেপে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়। অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মারুফের বিরুদ্ধেও রয়েছে বহু অভিযোগ। তিনি আ.লীগের ধর্মবিষয়ক স্থায়ী কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। অনেকে তার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের দাবি আওয়ামী সরকারের আমলে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ উপায়ে নিয়োগ পেয়েছেন। স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ ছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষক জানান, গত আগস্টে ড. আবদুল্লাহ আল মারুফ নিজে উপস্থিত থেকে বহিরাগত ভাড়াটে লোক দিয়ে শিক্ষার্থীদের টানানো ব্যানারগুলো ছিঁড়ে ফেলেন ও তালা ভেঙেছেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার ১ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে বিভাগের শিক্ষার্থীরা ড. মোহাম্মদ ইউসুফ, ড. বেলাল হোসাইন ও ড. আবদুল্লাহ আল মারুফের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ পেশ করেছেন।