ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) দুই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে স্বৈরাচার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরোধিতা, রাজনৈতিক পেশিশক্তি খাটিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক নিপীড়ন ও ধর্মীয় পোশাকের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের হেনস্থা এবং অকৃতকার্য করিয়ে দেওয়ার অভিযোগে স্থায়ী অব্যহতির দাবিতে ‘মার্চ টু আইইআর’ কর্মসূচি পালন করেন ইনস্টিটিউটটির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ইনস্টিটিউটের সামনে ‘মার্চ টু আইইআর’ শীর্ষক কর্মসূচির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বরে অবস্থান শুরু করেন তারা। এ সময় শতাধিক সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দেন।
অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন- অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান লিটু।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই দুই অধ্যাপক সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি ৬ সদস্যবিশিষ্ট ‘তথ্যানুসন্ধান কমিটি’ গঠন করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলাকালীন তাদের প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্বগুলো থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার সূত্র ধরে ড. এম. ওয়াহিদুজ্জামানকে আইইআরের পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করে অধ্যাপক হোসেনে আরা বেগমকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে। প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানিয়ে তদন্তের ক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
চতুর্থ বর্ষের বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, এক মাসব্যাপী চলা এই আন্দোলনকে সফল করতে শিক্ষার্থীরা প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। ইনস্টিটিউটকে কলঙ্কমুক্ত না করা পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তদন্তের জন্য তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠনের মাধ্যমে তাদের দাবির কেবল একটি অংশ পূরণ হয়েছে। সামনে রয়েছে আরও দীর্ঘপথ। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকালে ‘মার্চ টু আইইআর’ কর্মসূচি পালিত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের ভেতরে ঢুকতে চাইলে লিটু স্যার গেট খোলেননি। এ ছাড়া এই দুজন অধ্যাপক ধর্মীয় পোশাকের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করেছেন। মাহবুবুর রহমান লিটু স্যার ২৬তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থীকে ভাইভা বোর্ডে ফেইল করিয়ে দিয়েছেন হিজাব না খোলার কারণে। চাঁন স্যার আমাদের অনেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে হিজাব পরে আসার কারণে হেনস্থা করেছেন। পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে যেতে বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নিয়ে দুই অধ্যাপককে স্থায়ী অব্যহতি না দেবে ততদিন আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া, কর্মসূচি চলাকালে বর্তমান এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কবিতা আবৃত্তি, গান, শিক্ষকদ্বয়ের দ্বারা নিপীড়িত হওয়ার অভিজ্ঞতা বলা এবং রম্য বিতর্কসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে তাদের কর্মসূচিটি পালন করতে দেখা যায়।