বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি নতুন রাজনৈতিক দৃশ্যপটে উঠে এসেছে “জাতীয় নাগরিক কমিটি”। এই কমিটির লক্ষ্য হলো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশকে পুনর্গঠন করা। কমিটির আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিব হিসেবে যুব নেতৃত্বকে সামনে রেখে এই কমিটির গঠনকে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আজ রোববার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে এ কমিটি আত্মপ্রকাশ করেছে। পরে ৫৫ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক কমিটির ঘোষণা দেন নাসির।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যদের একটি তালিকা তুলে ধরা হয়েছেঃ
আহ্বায়ক: মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
সদস্য সচিব: আখতার হোসেন
মুখপাত্র: সামান্তা শারমিন
কমিটির সদস্যরা হলেন:
আরিফুল ইসলাম আদীব, সাইফ মোস্তাফিজ, মনিরা শারমিন, নাহিদা সারোয়ার চৌধুরি, সারোয়ার তুষার, মুতাসিম বিল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন মাহদি, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, অনিক রায়, জাবেদ রাসিন, মো. নিজাম উদ্দিন, সাবহানাজ রশীদ দিয়া, প্রাঞ্জল কস্তা, মঈনুল ইসলাম তুহিন, আব্দুল্লাহ আল আমিন, হুযাইফা ইবনে ওমর, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, সায়ক চাকমা, সানজিদা রহমান তুলি, আবু রায়হান খান, মাহমুদা আলম মিতু, অলিক মৃ, সাগুফতা বুশরা মিশমা, সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, তাসনিম জারা, মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, আজহার উদ্দিন অনিক, মো. মেসবাহ কামাল, আতাউল্লাহ, এস. এম. শাহরিয়ার, মানজুর- আল- মাতিন, প্রীতম দাশ, তাজনূভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব, মাজহারুল ইসলাম ফকির, সালেহ উদ্দিন সিফাত, মুশফিক উস সালেহীন, তাহসীন রিয়াজ, হাসান আলী খান, মো. আব্দুল আহাদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, মশিউর রহমান, আতিক মুজাহিদ, তানজিল মাহমুদ, আবদুল্ল্যাহ আল মামুন ফয়সাল, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, এস.এম. সুজা, মো. আরিফুর রাহমান, কানেতা ইয়া লাম লাম, সৈয়দা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার, সালমান মুহাম্মাদ মুক্তাদির ও আকরাম হুসেইন।
বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটির প্রাথমিক কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে:
১. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা।
২. ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহণ করা।
৩. রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার পরিসর তৈরি করা।
৪. বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা।
৫. দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা।
৬. জনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা।
৭. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষপে গ্রহণ করা।
৮. গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন করা।
কমিটির গুরুত্ব:
#যুব নেতৃত্ব: যুব নেতৃত্বকে সামনে রেখে গঠিত এই কমিটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
#গণতান্ত্রিক আন্দোলন: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য এই কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
#জনমত গঠন: বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে যোগাযোগ করে জনমত গঠনে সহায়তা করতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা:
#একতা বজায় রাখা: বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মধ্যে একতা বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
#সরকারের সাথে সম্পর্ক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে সহযোগিতা করতে গিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
#গণভোট: গণভোটের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এর জন্য ব্যাপক জনসমর্থন প্রয়োজন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির গঠন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই কমিটি সফল হলে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এই কমিটিকে সফল করার জন্য ব্যাপক জনসমর্থন ও একতা প্রয়োজন।