চট্টগ্রাম বিভাগীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য নতুন বাংলাদেশ গড়া। আর আপনাদের এ তারুণ্যই হবে নতুন বাংলাদেশ গড়ার হাতিয়ার। ফ্যাসিবাদের দোসর, হামলা মামলা ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার এ বাংলার মাটিতেই হবে। রাজনৈতিকভাবে সরকারকে ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদী কাঠামো গঠন করতে দেওয়া হবে না। আমরা দেখেছি, বিচার বিভাগকে কিভাবে পরাস্ত করা হয়। বিচার বিভাগকে মানুষের আস্থার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রত্যেকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠিত করতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে।
শক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লক্ষ্মীপুর বালিকা বিদ্যানিকেতন মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্পিরিটকে ধারণ করে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনসহ রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে এ আয়োজন করা হয়।
আব্দুল কাদের আরও বলেন, আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ঠুনকো স্বার্থ নিয়ে দলাদলি করেন। সেক্ষেত্রে আপনারা আবারও পরাজিত হবেন। আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠবে অপরাজিত শক্তি। ২৪ জুলাই বিপ্লবের অপরাজিত শক্তি আবারও সামনে আসবে আপনাদেরকে রুখে দিতে। সরকারকে ব্যবহার করে দুর্নীতির আখড়া গড়া, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার সংস্কৃতি কায়েম করতে দেওয়া হবে না। হোক তা দলীয় কিংবা প্রশাসনিক সন্ত্রাসী। যারা সরকারের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করেছেন আমরা আপনাদের লালকার্ড দেখাতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা সমন্বয়ক নই, আমরা বন্ধু হতে চাই। আপনি যদি সমন্বয়ক হতে চান, তাহলে শহীদ পরিবারের কাছে যান। শহীদ ভাইয়ের কবরের কাছে গিয়ে দাঁড়ান। তখনই নিজের মনে আকুতি দেখতে পাবেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র সমন্বয়ক হামযা মাহবুব ( ঢাবি), জিয়া উদ্দিন আয়ান (জাবি), সুমাইয়া আক্তার (ঢাবি), আলী আহাম্মেদ আরাফ (জবি), তাসনিয়া নওরীন (বিইউবিটি), মোঃ মহিউদ্দিন ( ঢাবি) ও খালেদ হাসান (ঢাবি)।
মতবিনিময় সভায় লক্ষ্মীপুরে ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আল আসাদ আফনান পাটওয়ারীর মা নাছিমা আক্তার উপস্থিত ছিলেন। মাইক হাতে তিনি বলেন, আমি সর্বহারা হয়ে গেছি। আমি বাসাবাড়িতে থাকতে পারছি না। আমি হুমকির মুখে পড়ে গেছি। আজ এখানে- কাল ওখানে, এভাবেই রাত অতিবাহিত করতে হয়। হায়নার দল আমাকে খুঁজছে। আমাকে নিলেই নাকি মামলা তছনছ হয়ে যাবে, তারা এটাই চাচ্ছে। তারা হাইকোর্টে মামলা খারিজের জন্য ঘুরছে। বর্তমান সরকারের কাছে একটাই দাবি, হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বাংলার মাটিতে আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। শুধু আমার ছেলে আফনান হত্যার বিচার নয় সব ছাত্র হত্যার বিচার করতে হবে।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুরে গত ৪ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলা-গুলি চালায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। ওইদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪ শিক্ষার্থী আফনান, সাব্বির হোসেন রাসেল, কাউসার হোসেন ও ওসমান গণি নিহত হন। পরে আফনানের মা নাছিমা আক্তার ও সাব্বিরের বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় দুটি পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করেন। দুই মামলাতেই সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন পদধারীসহ দেড় শতাধিক নাম উল্লেখ করা হয় মামলাগুলোতে।