পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোট ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তীব্র সমোলোচনা করেছেন দেশটির কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি দেশটির বর্তমান পরিস্থিতিকে পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের আমলের সাথে তুলনা করে বলেছেন, দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ‘‘ধ্বংস’’ করা হচ্ছে।
নিজের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ওপর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দমনপীড়নের নিন্দা জানিয়ে ইমরান খান বর্তমান সরকারকে ‘‘ইয়াহিয়া খান পার্ট-২’’ বলে অভিহিত করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইমরান খান বলেছেন, ‘‘দেশ বর্তমানে স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের শাসনের মুখোমুখি হয়েছে। (জেনারেল) ইয়াহিয়া খান দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ইয়াহিয়া খান পার্ট-২ একই কাজ করছে এবং দেশের প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে।’’
এরপরই তিনি দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন জোটকে ‘‘ইয়াহিয়া খান পার্ট-২’’ বলে অভিহিত করে তীব্র সমালোচনা করেন। ইমরান খান বলেন, ইয়াহিয়া খান পার্ট-২-এর দালাল তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচারক হুমায়ুন দিলাওয়ারকে কোটি কোটি টাকার জমি ও অবৈধ এনওসি (অনাপত্তি সার্টিফিকেট) উপহার দিয়েছিল; যাতে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়। এর ফলে আমাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এমনকি বুশরার (খান) বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার তিন ঘণ্টা আগে বিচারককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অফিসার ছিলেন। তিনি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার শাসনামলে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
এক্সে দেওয়া পোস্টে ইমরান খান আরও অভিযোগ করে বলেছেন, কাজী ফয়েজ ইসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কারণ তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্বাচনী কারচুপিতে জড়িতদের ‘‘জবাবদিহিতা থেকে সুরক্ষা’’ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, শেহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী বলার কোনও যৌক্তিকতা নেই। কারণ তিনি নিছক একজন ‘‘টাউট’’ এবং তার সব সিদ্ধান্তের জন্য সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়।
কারাবন্দি এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে জানে, এই টাউটকে আগামীকাল জোর করে গুম করাও হতে পারে। পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সমালোচনা করে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের চেয়ে সিঙ্গাপুরে বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। দেশে কেবল আইনের শাসন নিশ্চিত হলেই বিদেশি বিনিয়োগ আসে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা সিঙ্গাপুরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার এনেছে। করাচির থেকেও কম জনসংখ্যার দেশ সিঙ্গাপুর। আর বিশ্বের পঞ্চম জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানে ইতিহাসের সর্বনিম্ন বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা এক বিলিয়ন ডলারেরও কম। ডলার বিনিয়োগ শুধুমাত্র সেই দেশেই করা হয়, যেখানে আইনের শাসন নিশ্চিত করা হয়।
একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে আদিয়ালা কারাগারে বন্দি রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট তারকা ও রাজনীতিক ইমরান খান। কারাগারে থেকেও তিনি প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট করেছেন। সম্প্রতি তার করা একটি পোস্ট নিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে। ওই পোস্টে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগ তোলা হয়েছে।