বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে “জামিয়া শহীদ আবু সাঈদ” নামে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান। এই মাদরাসাটি শহীদ আবু সাঈদের গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে তার কবরের পাশে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে আয়োজিত রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, জালেম শাসকগোষ্ঠী থেকে স্বাধীনতা অর্জনে উলামায়ে কেরামের সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে। আগামীতে এই জমিনে কোনো জালিমকে ছাত্র-জনতা বরদাশত করবে না।
তিনি আরও বলেন, সংবিধান সংশোধন করে সর্ব শক্তিমান আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিস্থাপন করতে হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক সকল বিষয় বাদ দিয়ে নতুন পাঠ্যপুস্তক তৈরি করতে হবে। ২০১৩ সাল থেকে আজ অবধি হেফাজতের নামে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
শায়েখ সাজিদুর রহমান এ সময় শহীদ আবু সাঈদসহ ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে, ২০২১ সালে মোদী বিরোধী আন্দোলনে এবং ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাহাদাত বরণকারীদের স্মরণে “জামিয়া শহীদ আবু সাঈদ” নামকরণ করে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এই মাদরাসাটি শহীদ আবু সাঈদের কবরের পাশে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
বিভাগীয় গণসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেদী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, অর্থ সম্পাদক মুফতি মুনীর হোসাইন কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুফতি বশির উল্লাহ। বিভাগীয় গণসমাবেশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জুম্মাপাড়া মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ ইদ্রিস আলী।
গণসমাবেশে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা কালনাগিনী হয়ে রাতে দংশন করতো সংখ্যালঘুদের আর দিনের বেলা ওঝা হয়ে ঝাড়তো। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নাটক বন্ধ হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। হেফাজতে ইসলাম সম্প্রীতির বাংলাদেশ চায়, কোনো দাঙ্গা হাঙ্গামা চায় না।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি নির্যাতনের শিকার হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নির্যাতনের শিকার হয়েছে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গণহত্যার শিকার হয়েছে, সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। হাসিনাকে ধরে এনে তার মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদেরসহ বাংলার মাটিতে বিচার কায়েম করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এখনও শিক্ষাব্যবস্থা থেকে নাস্তিকতাবাদীর শিকড় উপরে ফেলা হয়নি। আমরা যৌক্তিক সময় দিতে চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাহানা দিয়ে বেশি সময় দেওয়া যাবে না। আগামী শিক্ষাবর্ষের আগেই জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে নাস্তিকতার শিকড় উপরে ফেলতে হবে। আর যদি তা না করেন, তাহলে হেফাজতের মঞ্চ থেকে বলছি, আগামী ২০২৫ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে নতুন কোনো পাঠ্যসূচি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।
মামুনুল হক বলেন, বিগত সরকার ও তার দোসররা আমাদের আল্লামা শফি আহমেদকে হত্যা করেছে, মহাসচিব মরহুম কাসেমী সাহেবকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করেছে, জুনায়েদ নগরীকে হত্যা করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলব, এই তিন হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীকে চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। আমরা যৌক্তিক সময় দেব। এরপরেও যদি তোমরা করতে না পার, ব্যর্থ হও, তাহলে কতধানে কত চাল হেফাজতে ইসলাম তা বুঝিয়ে দেবে। এসময় তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
এর আগে মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন এবং পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গভীর সমবেদনা জানান। এ সময় হেফাজতের পক্ষ থেকে শহীদ আবু সাঈদের পরিবারকে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।