বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকল শহীদ, আহত ও পঙ্গুদের রাষ্ট্র থেকে ক্ষতিপূরণ ও ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা শহীদ, আহত, নিখোঁজ ও পঙ্গুদের পরিবারকে রাষ্ট্রের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ ও ভাতা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’ বিএনপি মহাসচিব আজ বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গত ১৬ বছরে জীবন দেওয়া শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৬০ লাখ বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ১ লাখ ৪৫ হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি এসময় গত ১৬ বছরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, তাদেরকে অনেক নির্যাতন, দমন ও নিপীড়ন করা হয়েছে। আমাদের প্রায় সাত শতাধিক ভাই-বোন নিখোঁজ হয়েছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পরিকল্পিতভাবে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে। সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে তোলে। মানুষ মনে করে আমরা ইতিমধ্যেই স্বাধীন হয়েছি, বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু ভিন্ন।’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সবাইকে জাতীয় ঐক্য রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এখনও ষড়যন্ত্রকারীরা সর্বত্র নানামুখী অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আমাদেরকে দ্বিধা-বিভক্ত করার অপচেষ্টা করছে। আমরা গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে লড়াই-সংগ্রাম করেছি। তাই আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা।’
ফখরুল বলেন, ‘অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেয়েছি। আর এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা আকাশচুম্বি।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ মনে করে যে সরকার দেশের গণতান্ত্রিক অঙ্গনে সবার জন্য সমান সুযোগের পরিবেশ তৈরি করবে এবং সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে কার্যকর করে তুলবে। যাতে এর মাধ্যমে দেশবাসী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার পায়।
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করা এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পাতানো কোনো ফাঁদ বা ষড়যন্ত্রে না পড়ায় মির্জা ফখরুল বিএনপির নেতা-কর্মী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে শহীদ ও নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা গত ১৬ বছরে সংঘটিত সকল হত্যা, গুম, নির্যাতন, নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ স্মরণ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় অঝোর বৃষ্টির মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হয়।