বাংলাদেশের টেলিকম খাতে বিপ্লব ঘটাতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে হুয়াওয়ে ও ওয়ালটন। দেশের বিটিএসগুলোতে ব্যবহারের জন্য লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার হুয়াওয়ে বাংলাদেশ একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং এবং ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল আলম অভি, গ্রামীণফোনের টেকনোলজি ডিভিশনের টাওয়ার ইনফ্রার পরিচালক ও প্রধান মো. আব্দুর রায়হান এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের অন্যান্য প্রতিনিধিরাও এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
বাংলাদেশের টেলিকম খাতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। ওয়ালটন ও হুয়াওয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে দেশে লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনের পথ সুগম হলো। আগামী সাত মাসের মধ্যে ওয়ালটন বছরে ৮০ হাজার ব্যাটারি উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন একটি আধুনিক কারখানা স্থাপন করবে। এই ব্যাটারিগুলো দেশের টেলিকম টাওয়ারগুলোতে ব্যবহৃত হবে।
কেন লিথিয়াম ব্যাটারি?
পরিবেশবান্ধব: লিথিয়াম ব্যাটারি লেড-এসিড ব্যাটারির তুলনায় অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। এটি বায়ু ও মাটি দূষণ কম করে এবং কার্বন নিঃসরণও অনেক কম।
দক্ষতা: লিথিয়াম ব্যাটারি লেড-এসিড ব্যাটারির চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ। এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।
সম্পদ সঞ্চয়: দেশীয় উৎপাদনের ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় হবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
হুয়াওয়ের ভূমিকা
হুয়াওয়ে এই প্রকল্পে প্রযুক্তিগত সহায়তা, ডিজাইন, কাঁচামাল এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। তাদের বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বাংলাদেশের টেলিকম খাতকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।
এই চুক্তির গুরুত্ব
টেকসই উন্নয়ন: লিথিয়াম ব্যাটারির ব্যবহার বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ: এটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
উন্নত টেলিকম সেবা: লিথিয়াম ব্যাটারির ব্যবহারের ফলে গ্রাহকরা আরও ভালো টেলিকম সেবা পাবেন।
অপরদিকে, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির কার্যকারিতা প্রায় শতভাগ। এই ব্যাটারি যেমন দীর্ঘস্থায়ী, তেমন এর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনও কম। পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি পরিবেশবান্ধব। এই কারণে বিটিএস টাওয়ারের ব্যাকআপ পাওয়ার হিসেবে লিথিয়াম ব্যাটারি টেলিকমখাতে ইতোমধ্যেই গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে বাংলাদেশের বাজারে এখনো নিম্ন মানের নন-ইন্টেলিজেন্ট লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহৃত হচ্ছে। এইসব নন-ইন্টেলিজেন্ট লিথিয়াম ব্যাটারির স্থায়িত্ব কম এবং রক্ষণাবেক্ষণও বেশ জটিল। এছাড়া এনএমএস (নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম)-এর মাধ্যমে এসব ব্যাটারির ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। এই ধরনের নন-ইন্টেলিজেন্ট লিথিয়াম ব্যাটারি কোনো সাইট থেকে চুরি হলে টেলিকম অপারেটররা সময়মতো চুরির ঘটনা সনাক্ত করতে পারে না। ফলে সেই সাইটে ব্যাকআপ পাওয়ার থাকে না এবং অনেক সময় সাইটটি বন্ধও হয়ে যায়। এই কারণে সেই এলাকার ব্যবহারকারীরা নেটওয়ার্ক সমস্যার সম্মুখীন হন।
হুয়াওয়ে ও ওয়ালটনের চুক্তি এবং আগামীতে উৎপাদিত উচ্চমানের ইন্টেলিজেন্ট ব্যাটারি টেলিকম শিল্পে খরচ সাশ্রয়, পরিচালনা দক্ষতা বৃদ্ধি ও দুর্যোগ পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে। এছাড়া এর ব্যবহার বাংলাদেশকে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাহায্য করবে।