লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলির ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুসহ ৫১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৬৩ জনের নাম উল্লেখ ও ৩৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আল সবুজ ভূঁইয়া নামে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী অঞ্চল সদর আদালতে বাদী হয়ে ১৬৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সবুজ ভূঁইয়া।
আদালতের বিচারক আবু ইউছুফ মামলাটি আমলে নিয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এফআইআর দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়। ২ নম্বর আসামি করা হয় লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুকে।
মামলায় উল্লেখ করা হয় পিংকুর হুকুমে টিপুর নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও গুলি করেন। ঘটনার সময় বাদী সবুজ ভূঁইয়ার শরীরেও ৪টি গুলি লেগেছে বলে তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
মামলার বাদী সবুজ রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের বামনী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার ছেলে।
অন্যান্য আসামিরা হলেন প্রধান আসামি টিপুর বড় ভাই আফতাব উদ্দিন বিপ্লব, ছোট ভাই শিবলু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেল, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সেবাব নেওয়াজ, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন লিকা, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর খোকন বড় মিয়া, উত্তম দত্ত, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রাহিমা আক্তারসহ ১৬৩ জন। এছাড়া ৩৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এজাহার সূত্র জানায়, অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা পিংকু ও বিপ্লবের নির্দেশে টিপুর নেতৃত্বে অন্যান্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ গুলিবর্ষণ করে। এতে কয়েকজন ছাত্র-জনতা মারা যান। ওই ঘটনায় মামলা বাদী সবুজ ভূঁইয়া গুলিবিদ্ধ হন। তার শরীরে ৪টি গুলি লেগেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি চিকিৎসাধীন থাকায় এবং অভিযুক্তদের নাম ঠিকানা সংগ্রহের কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী মোসাদ্দেক হোসেন বাবর বলেন, মামলাটি বিচারক আমলে নিয়েছেন। এফআইআর দাখিলের জন্য আদালত সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, মামলার বিষয়টি শুনিনি। আদালতের নির্দেশনাও পাইনি। আদালতের আদেশ কপি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে ৪ শিক্ষার্থী নিহত ও শতাধিক ছাত্রজনতা আহত হন। ওইদিন নিহত শিক্ষার্থী আফনান পাটওয়ারীর মা নাছিমা আক্তার ও সাব্বির হোসেন রাসেলের বাবা আমির হোসেন পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৬ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ আহম্মদ পাটওয়ারী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এর আগে ২০ আগস্ট সাব্বির হত্যা মামলায় সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী গ্রেপ্তার হন। এছাড়া ২৫ আগস্ট হত্যা মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবনে হুছাইন ভুলুকে গ্রেপ্তার করা হয়।