নিম্নচাপের প্রভাবে কুষ্টিয়ায় অভূতপূর্ব বৃষ্টিপাতের ফলে জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ ২৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ এবং গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল, আদালত চত্বর, টিএন্ডটি অফিসসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, চাঁদপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন গ্রামে হাঁটু পানি জমেছে। অনেক জায়গায় ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে।
ভারী বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবী, খামারি এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকেই খাদ্য ও আশ্রয়ের সংকটে পড়েছেন।
সদকী ইউনিয়নের গড়েরমাঠ এলাকার চাষি সুজন আলী পলাশের স্বপ্ন ভেঙে গেলো প্রবল বৃষ্টিতে। প্রায় ২২ বিঘা জমির পুকুরে তিনি মাছ চাষ করেছিলেন। পুকুরপাড়ে লাউ, ঝিঙেসহ নানা ধরনের সবজিও চাষ করেছিলেন। মাত্র দুই মাসের মধ্যে তিনি প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ বিক্রির আশা করেছিলেন। কিন্তু কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে পুকুর ভেসে গেছে। সবজিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এই দুর্যোগে সুজন প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
অন্যদিকে, যদুবয়রা পশুহাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. আব্দুল গনি জানান, ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার কারণে গত রবিবার হাটে মাত্র দুটি গরু এসেছিল এবং কোনোটিই বিক্রি হয়নি।
গত শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাতে কুষ্টিয়া জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফসলের মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে এবং কিছু গাছপালা ও ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। তবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, নিম্নচাপের প্রভাবে এই ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এর আগে ২০১৮ সালে ৭৯ মিলিমিটার, ২০১৯ সালে ৪৪, ২০২০ সালে ৪৯, ২০২১ সালে ১০৫, ২০২২ সালে ৬৪ ও ২০২৩ সালে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মো. আল আমিন জানান, গত শনিবার বিকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে সোমবার দুপুর পর্যন্ত চলে। দমকা ঝড়ো হাওয়াও ছিল। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করেছে।
ভারী বৃষ্টির কারণে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন ফসলের মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। চাষিরা এখন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জনজীবন বিঘ্নিত হয়েছে। অনেক সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলা প্রশাসন জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশ পরিষ্কার হওয়ায় কুষ্টিয়াবাসী আশা করছেন যে পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় এই এলাকার ৫০ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৩০ হেক্টর মাসকলাই, ৬০ হেক্টর সবজি এবং ৬০ হেক্টর জমির কলা খেত আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই বৃষ্টিতে কৃষকরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তা সত্যিই দুঃখজনক। সরকারিভাবে তাদের জন্য কোনো সহায়তা দেওয়া হবে কিনা, সেদিকে নজর রাখা জরুরি।