মেহেরপুরের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন, গাংনী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্রনাথ সরকারসহ ২১ জনের নামে চাঁদাবাজি মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঘটনার পাঁচ বছর পর গাংনীর বিজ্ঞ আমলি আদালত, বিচারক জাহিদুর রহমানের আদালতে মামলাটি করেন পৌরসভার চৌাগাছা গ্রামের ভিকটিম মনিরুজ্জামান (৪৪)।
জানা গেছে, ভিকটিম মনিরুজ্জামানের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন গাংনী থানার তৎকালীন ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার, সাবেক এমপি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকনসহ অন্যান্য আসামিরা। সেসময় ভিকটিম তাদের হাতে ২ লাখ টাকা দিয়েও মুক্তি পাননি। ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার চাঁদার ৫ লাখ টাকা পুরোটা না পেয়ে ভিকটিমকে শারীরিকভাবে নির্যাতনসহ ক্রস ফায়ারের হুমকি ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ তিনটি মিথ্যা মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দেন। এ ঘটনার পাঁচ বছর পর এসে বিজ্ঞ আমলি আদালতে মামলাটি করা হয়েছে।
মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন, গাংনী থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হক, এসআই বখতিয়ার, এসআই ইসরাফিল হক, এসআই নারদ কুমার, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শরীফুল ইসলাম, এএসআই রেদওয়ানুল হক, ডিএসবির কনস্টেবল বজলুর রহমান, চৌকিদার মো. শামীম, গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন, গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আইতাল হক, আব্দুর রশিদ, গাংনী শহরের আব্দুল খালেক, গাংনী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌগাছা গ্রামের মজিরুল ইসলাম মিয়া, নিশিপুর গ্রামের আব্দুল কাদের, বামন্দী বাসস্ট্যান্ড এলাকার রাজনুল হক, শিমুলতলা গ্রামের আকছেদ আলী, কাজিপুর গ্রামের মো. স্বপন আলী, মো. ঝন্টু, ও মটমুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে গাংনী উপজেলা শহরের আব্দুল মালেক ফল ভাণ্ডারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মনিরুজ্জামান। এ সময় চৌকিদার শামীম তাকে ডেকে যুবলীগ নেতা মোশাররফ হোসেনের অফিসে নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছালে মামলায় উল্লিখিত আসামিরা তাকে চড় থাপ্পড় মেরে বলেন, ৫ লাখ টাকা চেয়েছিলাম, এখনো পরিশোধ করিসনি কেনো। পরে ডিএসবি কনস্টেবল বজলুর রহমান ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজনকে খবর দিলে তারা ১ লাখ টাকা নিয়ে মোশাররফ হোসেনের অফিসে যান। এ সময় তারা আরও টাকা দাবি করেন। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তারা পুলিশে খবর দেন। পরে গাংনী থানার এসআই আব্দুল হকের নেতৃত্বে ৬-৭ জন পুলিশ গিয়ে ভুক্তভোগীকে আটকের পর থানায় নেয়।
এরপর তৎকালীন ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকারের কক্ষে ভুক্তভোগীকে চোখ বেঁধে ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে মারধর করা হয়। এ সময় ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ৫ লাখ টাকা না দিলে ওইদিন রাতেই তাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হবে। একপর্যায়ে তাকে চোখ বেঁধে পুলিশের গাড়িতে তুলে একটি মাঠে নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়। একইদিন দিনগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে ২ লাখ টাকা দেয় ভুক্তভোগীর পরিবার। তারপরেও বাকি ২ লাখ টাকা না পেয়ে অবশেষে মনিরুজ্জামানের নামে সার্টারগান ও বিস্ফোরক আইনসহ তিনটি মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। মামলাগুলো এখনো আদালতে বিচারাধীন। এতদিন পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামান মামলা করার সাহস পাননি।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান বলেন, বিজ্ঞ বিচারক আমাদের আর্জি শুনে খুশি হয়ে গাংনী থানা পুলিশকে মামলাটি নথিভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন। আশা করছি আমরা আদালতে ন্যায় বিচার পাবো।