ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় অবস্থিত মেরকাটো মার্কেটের একজন জনপ্রিয় ফ্যাশন শিল্পী মেদানিত ওলডেজেব্রিয়েল বর্তমানে গভীর দুশ্চিন্তায় আছেন। তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পোশাক আমদানি করে তিনি নিজের একটি ছোট ফ্যাশন হাউস চালান। কিন্তু গত দুই মাসের মধ্যে পোশাকের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় তার ব্যবসা প্রায় পুরোপুরিই স্থবির হয়ে পড়েছে।
দাম বৃদ্ধির ফলে ক্রেতারা আর তাঁর দোকানে আসছেন না। ফলে মেদানিতের মতো অনেক ছোট ব্যবসায়ীই এখন আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন। আদ্দিস আবাবা থেকে এএফপি’র প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
ইথিওপিয়া মুদ্রার মূল্যহ্রাসে জর্জরিত
গত ৩০ জুলাই ইথিওপিয়া সরকার একটি কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দেশটি তার মুদ্রা ‘বির’কে ডলারের বিপরীতে অবাধে লেনদেনের অনুমতি দেয়, যাকে মুদ্রা ভাসমান বলা হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির অর্থনীতির ওপর বিপরীত প্রভাব পড়েছে। মুদ্রা ভাসমানের মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে বিরের মূল্য প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়।
কেন মুদ্রার মূল্য কমলো?
ইথিওপিয়ার আমদানি খরচ রপ্তানির চেয়ে অনেক বেশি। দেশটি প্রয়োজনীয় খাদ্য, যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি অন্য দেশ থেকে আমদানি করে। কিন্তু দেশীয় পণ্য রপ্তানি করে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, তা দিয়ে মাত্র দুই সপ্তাহের আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব। এই অসামঞ্জস্যের কারণে মুদ্রার মূল্য ক্রমাগত কমতে থাকে।
মুদ্রা ভাসমানের ফলাফল
- মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি: বিরের মূল্য কমার ফলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে এবং দারিদ্র্য বেড়েছে।
- আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি: বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করা আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে।
- বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাস: মুদ্রার অস্থিরতার কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা ইথিওপিয়ায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহ হারাচ্ছে।
সরকারের সম্মুখীন চ্যালেঞ্জ
ইথিওপিয়ার সরকার এই সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে দ্রুত সমাধান খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের শর্ত: ইথিওপিয়া বর্তমানে গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংক দেশটিকে ৩৪০ কোটি এবং ১৫০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু এই সহায়তা পাওয়ার জন্য ইথিওপিয়াকে তাদের মুদ্রা, বিরকে, স্বাধীনভাবে বিনিময়যোগ্য করতে হবে। এই শর্তের কারণে দুই সংস্থার এই সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত হয়ে গেছে।
মুদ্রা ভাসমানের প্রভাব: মুদ্রা স্বাধীনভাবে বিনিময়যোগ্য করার মানে হলো, বিরের মূল্য এখন বাজারের চাহিদা ও সরবরাহ অনুযায়ী উঠানামা করবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলে ইথিওপিয়ার মুদ্রার মূল্য দ্রুত পতন হয়েছে। ফলে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে।
সাধারণ মানুষের দুর্দশা: ইথিওপিয়ার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রতিদিন ২.১৫ ডলারের কম আয় করে। মুদ্রার মূল্য পতনের ফলে তাদের ক্রয় ক্ষমতা আরও কমে গেছে। দেশের বাজারগুলোতে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী হয়েছে। একজন সাধারণ ক্রেতা জানিয়েছেন, মাত্র কয়েক মাস আগে যে দামে তিনি তার পরিবারের জন্য খাবার কিনতেন, এখন সেই একই পরিমাণ খাবার কিনতে তার অনেক বেশি টাকা খরচ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মুদ্রা ভাসমান করা দীর্ঘমেয়াদে ইথিওপিয়ার অর্থনীতিকে সুস্থ করতে সাহায্য করবে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে এটি সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন সময় সৃষ্টি করতে পারে। সরকারকে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।