দেশের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণীর হিসাব প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে। তবে চলতি বছরের হিসাব আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা দপ্তরে দিতে হবে।
আজ রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ির সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।
সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, সম্পদ বিবরণী দাখিল করা এখন থেকে বাধ্যতামূলক। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। তবে এবারেরটা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাব জমা দিতে হবে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। সিলগালা খামে করে জমা দিতে হবে এটি।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাবের মধ্যে আনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিষয়ে একটি ফরম তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী জমা দিতে হবে। না দিলে বা ভুল তথ্য দিলে মাত্রা অনুযায়ী গুরুদন্ড বা লঘুদন্ড দেওয়া হবে। সম্পদের বিবরণী সিলগালা খামে করে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।
সম্পদের তথ্য জমা না দিলে অথবা ভুল বা মিথ্যা হিসাব জমা দিলে কী কী ব্যবস্থা হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোখলেস উর রহমান বলেন, লঘু ও গুরুদন্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। লঘুদন্ডের মধ্যে প্রথমে রয়েছে তিরস্কার করা। এছাড়া চাকরির ক্ষেত্রে পদোন্নতি হবে না; আর্থিক ক্ষতি আদায় করা হবে। গুরুদন্ডের মধ্যে রয়েছে পদ থেকে নিচে নামিয়ে দেওয়া; চাকরি থেকে বরখাস্ত; বাধ্যতামূলক অবসর ও অপসারণের মতো পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, যারা ফাইনানসিয়াল জায়ান্ট হয়ে গিয়েছিল তারা সতর্ক হবে। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে।
জনপ্রশাসন সচিব জানান, সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ (৩০/১২/২০০২ তারিখের সংশোধনীসহ) এর বিধি-১৩ অনুযায়ী সব সরকারি কর্মচারীর জন্য সম্পদ-বিবরণী দাখিল করা আবশ্যক। বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১ সেপ্টেম্বর এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ-বিবরণী দাখিলের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘ক্যাডার/নন-ক্যাডার (নবম বা তদূর্ধ্ব গ্রেড) কর্মকর্তা তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবের নিকট সম্পদ-বিবরণী দাখিল করবেন। গেজেটেড/নন-গেজেটেড কর্মকর্তা/কর্মচারীরা (১০ম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড) নিজ নিজ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট তাদের সম্পদ-বিবরণী দাখিল করবেন।’
জমা প্রদান প্রক্রিয়া সম্পর্কে মোখলেস উর রহমান বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত নির্ধারিত ছকে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করতে হবে। ছকটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে। সম্পদ-বিবরণীটি সিলগালাকৃত খামে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা কোনো ভুল তথ্য প্রদান কিংবা তথ্য গোপন করা হলে বা সম্পদের কোনোরূপ অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই অনুশাসনমালা সব সরকারি কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদ-বিবরণীর গোপনীয়তা সংরক্ষণ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, আদালতের আদেশ ও সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত সম্পদ-বিবরণীর তথ্য সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ হস্তান্তরযোগ্য নয়। সম্পদ-বিবরণী অতি গোপনীয় দলিল বিধায় এক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ প্রযোজ্য হবে না।
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করা নিয়ে যা বলা হচ্ছে তা পুরোটাই গুজব উলে¬খ করে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।