যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান ক্রীড়া পরিদপ্তর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলাধূলা ও শারীরিক শিক্ষা কলেজ পরিচালনা করাই মূলত এই প্রতিষ্ঠানের কাজ। সেই প্রতিষ্ঠানে আজ আকস্মিকভাবে মানববন্ধন করেছেন কয়েকটি জেলার ক্রীড়া অফিসার, পরিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শারীরিক শিক্ষা কলেজের শিক্ষকগণ। তাদের এই মানববন্ধনে দাবি, পরিদপ্তরের পরিচালক আ ন ম তরিকুল ইসলামের অপসারণ।
বাংলাদেশে এখন জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে ৫১ জন ক্রীড়া অফিসার রয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জনই আজ পরিদপ্তরে হাজির হয়েছিলেন মানববন্ধনে। সেখানে ঠাকুরগাও জেলা ক্রীড়া অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পরিচালক হিসেবে তার উচিত ছিল সবাইকে সমান দৃষ্টিতে আগলে রাখা। তিনি সেটা না করে উল্টো ডিভাইড এন্ড রুল করে বৈষম্য করেন। বৈষম্যবিরোধী সফল আন্দোলনের পর ক্রীড়াঙ্গনে আমরা এমন বৈষম্যকারীকে চাই না। তিনি অপসারিত না হলে আমরা ক্রীড়া অফিসাররা জেলা পর্যায়ে ধর্মঘটে যাব।’
আজকের মানববন্ধনে নেতৃত্ব দিয়েছেন পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আলিমুজ্জামান। তিনি পরিচালক তরিকুল ইসলামের কর্মকান্ডকে বলেছেন লাল ফিতার দৌরাত্ন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে সততার অভাবসহ নানা অভিযোগ এনেছেন।
ক্রীড়া পরিদপ্তরের প্রধান পরিচালক যিনি যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার। তরিকুল ইসলাম পরিদপ্তরে এসেছেন এক বছরের মতো। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে কয়েকজন ক্রীড়া অফিসার ও সংশ্লিষ্ট কয়েকজন তরিকুলের প্রশংসা করেছিলেন। কিছু দিন আগে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে তরিকুল ইসলাম জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারও পেয়েছেন। সেই পুরস্কারকে এখন পরিদপ্তরের অনেকে বলছেন, তার দলীয় পরিচয় রয়েছে তাই এমন স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং তিনি দলীয় প্রভাব খাটাতেন অধনস্তদের ওপর।
পরিচালক তরিকুল ইসলামের নিজ কার্যালয়ে আসার পরিবেশ নেই। তার ওপর আনীত অভিযোগ ও সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে তিনি বলেন, ‘ক্রীড়া পরিদপ্তরের ইতিহাসে কখনো মন্ত্রণালয়ে অর্থ ফেরত দেয়া হয়নি। আমার এই স্বল্প সময়ের মধ্যে কোটি টাকার বেশি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে। বেশ স্বচ্ছতা ও নিরপক্ষেতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এর বিপরীতে তারা যে ভাষায় কথা বলছে, এ নিয়ে আমার কোনো কিছু বলারই রুচি নেই।’
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কর্মচারীদের অনেকে শৃঙ্খলের মধ্যে ছিলেন না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নতুন সচিব আমিনুল ইসলাম আগমনের পর কর্মচারীরা খানিকটা চাপে পড়েন। এনএসসি স্টাফের অসুস্থতাজনিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সচিবের অপসারণ দাবি করেছিলেন কর্মচারীরা। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের সচিবের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিভিন্ন সূত্রের খবর, ক্রীড়া পরিদপ্তরের পরিচালক তরিকুল ইসলামও বেশ কঠোর হাতে ক্রীড়া পরিদপ্তর পরিচালনা করছেন। বেশ কয়েকটি ফাইল আটকানোতেই নাকি আন্দোলন-মানববন্ধন চলছে।
আন্দোলনকারীরা যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টাকে পরিদপ্তরের পরিচালক তরিকুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিউদ্দিন আহমেদও বিষয়টি নিয়ে জ্ঞাত। চলতি সপ্তাহেই তিনি অবসরে যাচ্ছেন। এই সংকট নিরসনে তিনিই উদ্যোগ গ্রহণ করবেন, নাকি নতুন সচিব আসার পর হবে সেটাই দেখার বিষয়।