লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্র অবিরাম বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, সেখানকার বাসিন্দারা পালানোর সুযোগও পাচ্ছে না। ইসরায়েলি জঙ্গি বিমানের গোলা যেন তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
আলজাজিরার মঙ্গলবারের (২৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চলছে। ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা থেকে কোনো স্থাপনাই এখন নিরাপদ নয়। সোমবার থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৫ শিশুসহ ৪৯২ জন নিহত হয়েছেন। হাজারো মানুষ আহত হয়ে কাতরাচ্ছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। বেসামরিক নাগরিক তাদের লক্ষ্যবস্তু নয়। যুদ্ধক্ষেত্রে সহিংসতার সম্মুখীন হওয়া এড়াতে হিজবুল্লাহ সক্রিয় রয়েছে, এমন এলাকা থেকে লেবাননের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। অব্যাহত হামলার মুখে দক্ষিণ লেবানন থেকে লোকজনকে সরে যেতে দেখা গেছে।
এই নির্দেশের পর দশ হাজারের বেশি মানুষ সীমান্তবর্তী এলাকা ছেড়েছেন। নিজেদের বাড়ি ছাড়ার আগে তারা কেবল কয়েক মুহূর্ত সময় পেয়েছেন। আলজাজিরার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক জানান, আমরা দক্ষিণ লেবাননে ছিলাম। আমরা দেখেছি, বাসিন্দারা হাতের কাছে যা পেয়েছেন তা নিয়েই রওনা দিয়েছেন। কেউ কেউ দক্ষিণের শহর সিডনে চলে গেছেন। যা বৈরুত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে। অন্যরা বৈরুতে গেছেন। কেউ আরও উত্তরে পালানোর চেষ্টা করছেন।
মানুষের চোখে-মুখে ভয়। তাদের কেউ পুরো পরিবার নিয়ে হেঁটেই বৈরুতের দিকে ছুটছেন। কেউ জানেন না পরবর্তীতে কী হবে; তারা ঠিক কোথায় যাচ্ছেন বা কী খাবেন। কয়েকটি পরিবার আলজাজিরাকে বলেছে, ‘আমাদের চারপাশে বোমাবর্ষণ হচ্ছিল। ওই সময় পালানোর জন্য ঘর থেকে বের হতে হয়েছিল। কিন্তু যেখানেই যাচ্ছিলেন সেখানেই অবিরাম বিমান হামলা হয়েছে। আপনি জানেন না কোন রাস্তাটি নিরাপদ, এমনকি দক্ষিণ লেবাননের সাথে বৈরুতের সংযোগকারী প্রধান মহাসড়কেও বিমান হামলা দেখে এসেছি।’
সম্প্রতি লেবাননজুড়ে ওয়াকি-টকি ও পেজার বিস্ফোরণে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর একাধিক ঊর্ধ্বতন কমান্ডারসহ ৩৭ জন নিহত হন। এরপর প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের রামাত ডেভিড ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহও। ফলে লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সতর্কবার্তা জারি করে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের লেবাননে নিযুক্ত বিশেষ কর্মকর্তা জিনাইন হেনিস-প্লাসচার্ট এ সতর্কবার্তা দেন। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, এই অঞ্চলটি আসন্ন বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। এটিকে আর সামনে বাড়তে দেওয়া যায় না। কেননা উভয়পক্ষকে নিরাপদ করে তোলার মতো কোনো সামরিক সমাধান নেই। কিন্তু এর মধ্যেই লেবাননে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।