আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ঘরছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
গত পাঁচই অগাস্টের পর যেভাবে তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা হতে দেখা যাচ্ছিলো, সেটি এখন দেখা যাচ্ছে না।
ফলে এখন পরিবারের কাছে ফিরতে চাচ্ছেন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কিন্তু হঠাৎ এলাকায় ফিরলে যে হামলার শিকার হতে পারেন, সেই ভয়ও কাজ করছে তাদের মধ্যে।
সেজন্য এলাকায় এখন যারা প্রভাবশালী, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা।
আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন নেতা বিবিসি বাংলাকে বলেন, এটা ছাড়া তো উপায় নেই। বউ-বাচ্চা ফেলে আর কতদিন পালিয়ে বেড়াবো।
বেশিরভাগ এলাকায় বিএনপি এখন নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় দলটির নেতাদের সঙ্গেই মূলত যোগাযোগ করছেন ‘আত্মগোপনে’ থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
এলাকায় ফিরতে তাদের গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। ক্ষিণবঙ্গের একটি জেলার ওই নেতা বলেন, চেয়েছিল তিন লাখ, পরে অনেক বলে-কয়ে এক লাখ টাকা দিয়ে ফিরছি।
কিন্তু টাকাটা নিলেন কে? এ প্রশ্নের জবাবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, বড় কোনো নেতা না। আমাদের মতোই ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা। তবে তার নাম প্রকাশে রাজি হননি ওই আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনি বলেন, এটা জানাজানি হলে আরও ডিস্টার্ব করবে, বোঝেনই তো। তখন পরিবার নিয়ে এলাকায় থাকতে পারবো না।
তবে আওয়ামী লীগের এমন অনেক নেতা আছেন যারা টাকা দিয়েও ঘরে ফিরতে পারছেন না। তেমনই একজন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন যে, বাড়ি ফেরার জন্য দু’জন নেতাকে দুই দফায় টাকা দিয়েছি। কিন্তু এরপর তিন সপ্তাহ চলে গেল, বাড়ি যেতে পারলাম না। কবে যেতে পারবো, সেটাও জানি না।
কিন্তু টাকা দেওয়ার পরও কেন এলাকায় ফিরতে পারলেন না? জবাবে তিনি বলেন, কীভাবে ফিরবো? দু’জনরে টাকা দিয়েছি শুনে এখন আরো মানুষ মোবাইল করে টাকা চায়। কতজনকে টাকা দেবো?
দুই নেতাকে এখন পর্যন্ত যে দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন, সেটিও কোনো কাজে আসবে বলে মনে করছেন না তিনি।
প্রথম দফায় যারা টাকা নিয়েছেন, তারা বিএনপির স্থানীয় নেতা বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ তৃণমূলের নেতা। আর এখন যারা টাকা চাচ্ছেন, তারা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের পরিচয় দিচ্ছেন।
‘কেউ বলে যুবদলের নেতা, কেউ বলে স্বেচ্ছাসেবক দল। ওদেরকে টাকা না দিলে নাকি এলাকায় পা রাখতে দেবে না,’ বলেন আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের ওই নেতা।