গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ফলে তিস্তা নদীর জলস্তর ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উত্তরের লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এবং তাদের জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হয়েছে।
পানি বিপৎসীমা অতিক্রম: তিস্তা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, নীলফামারীর ডিমলা এবং রংপুরের কাউনিয়ায় পানির উচ্চতা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
পানিবন্দী মানুষ: লালমনিরহাটে ১৭ হাজার ৩৫০, নীলফামারীতে ৫ হাজার এবং কুড়িগ্রাম ও রংপুরে এক হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
কৃষি ও অর্থনীতির ক্ষতি: বন্যার ফলে কৃষি জমি ডুবে যাওয়া, ফসল নষ্ট হওয়া এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
সরকারি সহায়তা: সরকার দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা প্রদান করছে। তবে বিস্তৃত ক্ষতির তুলনায় এই সহায়তা যথেষ্ট নয় বলে অনেকে মনে করছেন।
অন্যান্য নদীর অবস্থা: তিস্তা ছাড়াও ধরলা, গঙ্গাধর, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
পূর্বাভাস: আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তার পানি কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে অন্যান্য নদীর অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক।
মানবিক সংকট: হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। খাদ্য, পানি ও স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
অর্থনৈতিক ক্ষতি: কৃষি জমি, ফসল, ঘরবাড়ি এবং অন্যান্য সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে স্থানীয় অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব পড়বে।
সামাজিক সমস্যা: বন্যার ফলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, মানসিক চাপ এবং সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কী করা উচিত:
দ্রুত ত্রাণ সহায়তা: পানিবন্দী মানুষদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা উচিত।
পুনর্বাসন: বন্যাক্ষত এলাকায় পুনর্বাসন কাজ দ্রুত শুরু করা উচিত।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা: ভবিষ্যতে এ ধরনের বন্যা মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। এতে বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন, জলাধার নির্মাণ এবং বন সংরক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
তিস্তা নদীর বন্যা উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবন ও জীবিকাকে বিপর্যস্ত করেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।