অসময়ে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও এখন কমতে শুরু করেছে। আকস্মিকভাবে পানি বৃদ্ধি ও কমার ফলে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে প্রতি বছর আমাদের ফসলি জমি নদীর পেটে চলে যাচ্ছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নর বিশ্বনাথ গ্রামের বাসিন্দা ফজিলা খাতুন ও বেল্লাল মিয়া।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ এই পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ১১ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে কাউনিয়ায় পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে পানি কমতে শুরু করলেও নতুন করে নদী ভাঙনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ অস্থায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা।
সেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ নিয়ে বেল্লাল মিয়া বলেন, এবারও ফসল চলে যাবে নদীর পেটে। এ নিয়ে চিন্তায় আছি। এরইমধ্যে আমাদের গ্রামের ১৫ থেকে ২০টি বাড়ি স্থানান্তর করা হয়েছে। এখনই যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে ১০০ থেকে ১৫০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে নদীভাঙন রোধে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এর আগে শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করে। শনিবার রাত ১১টার দিকে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার দশমিক ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
এর ফলে ফলে তিস্তার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন। ডুবে যায় কৃষকের ফসল; ভেসে যায় পুকুরের মাছ।
চর ঢুসমাড়া এলাকার বাসিন্দা কাইয়ুম বলেন, শুক্রবার থেকে হঠাৎ উজানের পানি আসতে থাকে। ফলে নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। শনিবার রাত থেকে পানি হু-হু করে বাড়ে। তবে এখন কমতে শুরু করেছে।
ডালিয়া বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপপ্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, উজানের ঢল আর বর্ষণে তিস্তায় পানির প্রবাহ বেড়েছিল। তখন পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও বর্তমানে কমতে শুরু করেছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।