সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করেছে ইসরায়েলে। এরপরই ভয়াবহ আতঙ্কে পড়ে হিজুল্লাহসহ গোষ্ঠীটির পৃষ্ঠপোষক ইরান।
এরই মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, নাসারুল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ হত্যাকে ন্যায়বিচার বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই মুহুর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ঘটনার ইরান, হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল ঠিক কী করবে।
ব্রিটিশ সংবামাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নাসরুল্লাহ নিহতের ঘটনা হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার একটি বড় অগ্রগতি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে এই অঞ্চলকে আরও বিস্তৃত ও বিপজ্জনক সংঘাতের আরেক ধাপ কাছে নিয়ে গেছে, এমনকি পরবর্তী সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান উভয় শক্তিই জড়িয়ে যেতে পারে।
গাজা যুদ্ধ শুরুর পরই একের পর এক আঘাতে জর্জরিত হিজবুল্লাহ । এক ডজনেরও বেশী শীর্ষ পর্যায়ের কমান্ডারের হত্যাকাণ্ডে এর কমান্ড কাঠামো বিপর্যস্ত। পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের ঘটনায় সংগঠনটির যোগাযোগ কাঠামো এবং বিমান হামলায় এর অস্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যেও লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। সংগঠনটির এখনো যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যার অনেকগুলোই দূরপাল্লার। নিজেরা আরও ধ্বংসের লক্ষ্যে পরিণত হওয়া বা নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগে সেগুলো ব্যবহারের জন্য গোষ্ঠীটির ভেতরে চাপ বাড়ছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হলে ইসরায়েলের জবাব হতে পারে আরও ভয়াবহ। তাতে লড়াই বিস্তৃত হতে পারে ইরান পর্যন্ত।
নাসরুল্লাহ হত্যাকাণ্ড ইরানের জন্যও একটি বড় ধাক্কা। এ ঘটনার পর পরই দেশটি তাদের নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে গোপন জায়গায় সরিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে, তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ ইরান এখনো নিতে পারেনি। মনে করা হচ্ছে ইরান মধ্যপ্রাচ্যের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে ইসরায়েলে এবং ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে হামলা করতে বলতে পারে।
এই নাসারুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর এটা স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি রাষ্ট্র একুশ দিনের যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে সে অনুযায়ী সামরিক অভিযান বন্ধের কোন লক্ষ্য ইসরায়েলের নেই। তাদের সামরিক বাহিনী মনে করে হিজবুল্লাহ এখন ব্যাকফুটে। সুতরাং ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি পুরোপুরি না যাওয়া পর্যন্ত তারা আরও আক্রমণ চালাতে চায়। এদিকে, হিজবুল্লাহর আত্মসমর্পণের সম্ভাবনা কম। সবশেষ যুদ্ধের পর হিজবুল্লাহ ১৮ বছর সময় ব্যয় করে পরবর্তী যুদ্ধের পর প্রশিক্ষণ নিয়েছে।