আধুনিকতার ছোঁয়ায় যখন বদলে যাচ্ছে দেশের গ্রামীণ জনপদ। প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে লেগেছে শহরের ছোঁয়া। তখন সম্পূর্ণ উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে দুর্ভোগ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে জীবন চালাতে হচ্ছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার রশিদপুরের বাসিন্দাদের।
স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও এ গ্রামে গড়ে ওঠেনি একটি পাকা সড়ক, নেই কোনো প্রাথামিক বিদ্যালয়ও। গ্রামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে চলা সরস্বতী নদীর বুকে নির্মাণ হয়নি সেতু। ফলে নানা ভোগান্তির মধ্য দিয়ে এ গ্রামের হাজারও মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে রশিদপুর গ্রামটির অবস্থান। চারটি পাড়া মিলে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৫০০। লোকসংখ্যা বসবাস করে প্রায় দুই হাজার। এর মধ্যে রশিদপুর নয়াপাড়াতেই ভোটার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অথচ এই পাড়াটিই নানা দিক থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রাম থেকে বের হওয়ার জন্য কোনো ধরনের পাকা সড়ক নেই। প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি শতবর্ষী পুরোনো কাঁচা রাস্তা রয়েছে, তবে সংস্কারের অভাবে ওই রাস্তাটিরও বেহালদশা। বৃষ্টি হলে পানি আর কাদায় সড়ক দিয়ে চলাচল দায় হয়ে পড়ে। রাস্তাটি গিয়ে ঠেকেছে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা সরস্বতী নদীর তীরে। নদীতে নেই কোনো সেতু। বর্ষা মৌসুমে রশি টানিয়ে ডিঙি নৌকায় পারা হতে হয় এ অঞ্চলের মানুষকে। আর শুকনো মৌসুমের ভরসা বাঁশের সাঁকো। গ্রাম থেকে নদী পর্যন্ত যাওয়ার জন্যও কোনো কাঁচা সড়ক ছিল না। সম্প্রতি কর্মসৃজন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামবাসীর দেওয়া জমির উপর দিয়ে একটি কাঁচা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এটা ছাড়া উপজেলা সদর বা জেলা শহরে যাবার বিকল্প কোনো রাস্তা নেই নয়াপাড়া-রশিদপুর গ্রামের বাসিন্দাদের।
আব্দুর রাজ্জাক, বেলাল ভূইয়া ও আশরাফ আলী রশিদপুর নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, রশিদপুর পূর্বপাড়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নয়াপাড়া, উত্তরপাড়া ও দক্ষিণপাড়ায় নেই কোনো ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গ্রামে একটি আরবি শিক্ষার মক্তব রয়েছে। পাশের গ্রামে আড়াই কিলোমিটার হেঁটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয় কোমলমতি শিশুদের। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে অন্তত ৫ কিলোমিটার দূরে। কয়েকশ শিক্ষার্থীকে নদী পার হয়ে অনেক কষ্টে স্কুলে যেতে হয়। আর বৃষ্টির দিনে তো স্কুলে যেতেই পারে না।
ভুক্তভোগী গ্রামবাসী বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে একটি রাস্তা ও সরস্বতী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে অনেকবার আবেদন করা হলেও কেউই আমলে নেয়নি।
রশিদপুর নয়াপাড়া গ্রামবাসীর যাতায়াতে দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আশরাফ আলী বলেন, গ্রামের মানুষের সুবিধার্থে অবিলম্বে একটি পাকা রাস্তা, স্কুল ও নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা জরুরি।
উল্লাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী আবু সায়েদ বলেন, রশিদপুর নয়াপাড়া গ্রামবাসীর চলাচলের দুর্ভোগের বিষয়টি আমরা জানি। পাটধারী থেকে রশিদপুর নয়াপাড়া ময়নাল খন্দকারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহম্মদ হাসনাত বলেন, আমি নতুন এসেছি। ওই গ্রামের দুর্ভোগের বিষয়গুলো নোট করে রাখলাম। নতুন প্রকল্পে নির্দেশনা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।