এআইয়ের আশীর্বাদ সঙ্গে সঙ্গে আসছে নতুন এক চ্যালেঞ্জ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলছে, নতুন নতুন সম্ভাবনা খুলে দিচ্ছে। কিন্তু এই প্রযুক্তিরই এক অন্ধকার দিক হচ্ছে ডিপফেক।
ডিপফেক কী?
এআই ব্যবহার করে তৈরি করা এমন ছবি বা ভিডিওকে ডিপফেক বলা হয়, যেখানে একজন ব্যক্তির মুখ বা শরীরকে অন্য কোনো ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, যে ছবিটি দেখা যাচ্ছে, সেটি আসলে বাস্তব নয়, কিন্তু দেখতে এতটাই বাস্তবসম্মত যে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পড়ে।
কেন ডিপফেক এতটা বিপজ্জনক?
- বিশ্বাসের সংকট: ডিপফেকের কারণে আমরা আর কোনো ছবি বা ভিডিওতে বিশ্বাস করতে পারছি না। এটি সামাজিক মিডিয়া এবং সংবাদ মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানোর একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
- প্রতিপত্তি নষ্ট: ডিপফেক ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তির প্রতিপত্তি নষ্ট করা সম্ভব।
- রাজনৈতিক অস্থিরতা: ডিপফেক ভিডিও ব্যবহার করে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা সম্ভব।
এরই মধ্যে এসে যোগ হয়েছে ছবি তৈরির একটি প্ল্যাটফর্ম, মিডজার্নি। যা ডিপফেইক তৈরি একেবারেই সহজ করে তুলেছে।
এ অবস্থায় কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ছবি শনাক্ত করবেন? এ নিয়ে একটি নির্দেশনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর বিস্তারিত।
ছবির ক্ষেত্রে:
- চোখ এবং মুখের প্রান্ত: ডিপফেক ছবিতে চোখ এবং মুখের প্রান্তে অনেক সময় অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। যেমন, চোখের আলোর প্রতিফলন অপ্রাকৃতিক হতে পারে বা মুখের চামড়া অস্বাভাবিকভাবে মসৃণ দেখাতে পারে।
- হাত এবং আঙুল: ডিপফেক ছবিতে হাত এবং আঙুলের গঠন অনেক সময় অস্বাভাবিক হয়। আঙুলের সংখ্যা বা আকার অন্যরকম হতে পারে, অথবা হাতের গতিবিধি অপ্রাকৃতিক দেখাতে পারে।
- মুখের চারপাশ: যদি কোনো ছবিতে মুখ প্রতিস্থাপন করা হয়, তাহলে মুখের চারপাশে হালকা ঝাপসা দেখা যেতে পারে।
ভিডিওর ক্ষেত্রে:
- লিপ-সিঙ্ক: ডিপফেক ভিডিওতে কথার সাথে ঠোঁটের মিল অস্বাভাবিক হতে পারে। ঠোঁটের গতিবিধি কৃত্রিম এবং অপ্রাকৃতিক মনে হতে পারে।
- চোখের পলক: ডিপফেক ভিডিওতে চোখের পলক ফেলার ধরন অস্বাভাবিক হতে পারে। চোখ অতিরিক্ত দ্রুত বা ধীরে পলক ফেলতে পারে।
- আলো ও ছায়া: ডিপফেক ভিডিওতে আলো ও ছায়ার খেলা অস্বাভাবিক হতে পারে। বিশেষ করে, মুখের উপর আলোর পড়ার ধরন অপ্রাকৃতিক মনে হতে পারে।
এছাড়াও, আপনি নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য করতে পারেন:
- পিক্সেলেশন: ডিপফেক ছবিতে কিছু এলাকায় পিক্সেলেশন দেখা যেতে পারে।
- অস্বাভাবিক আলো: ছবির আলো অস্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল বা অন্ধকার হতে পারে।
- অস্বাভাবিক পোশাক: ছবিতে থাকা ব্যক্তির পোশাক অস্বাভাবিকভাবে ঝুলে থাকতে পারে বা তার শরীরের সাথে মিল নাও খেতে পারে।
মনে রাখবেন: ডিপফেক তৈরির প্রযুক্তি দিন দিন উন্নত হচ্ছে। ফলে, ভবিষ্যতে ডিপফেক শনাক্ত করা আরও কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তবে, উপরের লক্ষণগুলো লক্ষ্য করলে আপনি অনেকটা হারে ডিপফেককে চিনতে পারবেন।