বিশ্বখ্যাত ইসলামি বক্তা এবং স্কলার জাকির নায়েক পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে দেশটিতে সফরে গিয়েছেন। সফরে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি।
বুধবার (২ অক্টোবর) গভর্নমেন্ট অব পাকিস্তানের এক্স হ্যান্ডল থেকে এ বৈঠকের একাধিক ছবি প্রকাশ করা হয়।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, প্রায় এক মাস থাকার পরিকল্পনা নিয়ে পাকিস্তানে এসেছেন জাকির নায়েক। সঙ্গে এসেছেন তার ছেলে ফারিক নায়েক, যিনি নিজেও একজন ইসলামিক স্কলার।
সোমবার পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে দেশটিতে যান জাকির নায়েক। ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার পর সেখানে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এসময় ডা. জাকির নায়েক বলেন, মুসলিম উম্মাহর উচিত নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। ইসলাম শান্তি, ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম, আমার প্রচার কাজের উদ্দেশ্য বিশ্বে ইসলামের শান্তি ও ভালোবাসার প্রকৃত বার্তা তুলে ধরা।
জাকির নায়েকের আগমন নিয়ে পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই এক মাসের সফরে পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ কয়েক জন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করবেন জাকির নায়েক। পাশাপাশি ইসলামাবাদ, করাচি এবং লাহোরে কয়েকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দেবেন। এছাড়া, বেশ কয়েকটি মসজিদে তিনি জুমার নামাজেও ইমামতি করবেন তিনি।
উল্লেখ্য, একজন ভারতীয় নাগরিক জাকির নায়েক। ভারত সরকার অর্থপাচার নিয়ে মামলা করায় তিনি নিজ দেশ থেকে মালয়েশিয়ায় চলে যান। আইনি জটিলতার কারণে বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন জাকির নায়েক।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ধর্মীয় উসকানির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ আছে ড. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে। তিনি দেশটির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন। ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে ‘ওয়ান্টেড’ আসামি হিসেবে ঘোষণা করেছে অনেক আগেই।
এদিকে মালয়েশিয়ার কাছে ভারত সরকার জাকির নায়েককে দেশে প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এখনোও পর্যন্ত তাতে সাড়া দেয়নি মালয়েশিয়া।
জাকির নায়েক ২০১৬ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন। তখন থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) তার বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির (বর্তমানে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা) প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা দায়ের করে।
প্রসঙ্গক্রমে, ২০১৬ সালে জুলাইয়ে ঢাকার গুলশান এলাকায় অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
কারণ হিসেবে জানা যায়, হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকা একজন সন্ত্রাসী স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি জাকির নায়েকের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত বক্তব্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, জাকির নায়েক পিস টিভি নামের একটি টেলিভিশন চ্যানেল পরিচালনা করতেন। সেখানেই ধর্ম সংক্রান্ত আলোচনা করতেন তিনি। তবে লাগাতার উসকানিমূলক ও অন্যান্য ধর্মের প্রতি ঘৃণামূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ, ভারত এবং শ্রীলংকায় তার টেলিভিশন চ্যানেলটি নিষিদ্ধ হয়। এছাড়া উগ্র বক্তব্যর দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে দেশ দু’টির সরকার।
যে বছর পিস টিভি নিষিদ্ধ হয়, সেই ২০১৬ সালে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে। মামলা হওয়ার সময় অবশ্য দেশের বাইরে ছিলেন জাকির। মামলার সংবাদ শুনে আর ভারতে ফেরেননি তিনি।