৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) সেই অর্থে শুটিং হয়নি। তবে একশ্রেণির প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনয়শিল্পী নিজেদের নতুন করে রাজনৈতিক আত্মপরিচয় জানান দেওয়ার জন্য সমিতিগুলোর সংস্কারের কথা বলে এফডিসিতে আসছেন। এরই মধ্যে গতকাল নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এর আগেও আগস্টের শেষে ‘বৈষম্যবিরোধী চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি’ নামে আরও একটি সংগঠন যাত্রা শুরু করে। হঠাৎ এমন কমিটি নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।
এফডিসির একটি সূত্র জানায়, এই নিয়ে দুই থেকে তিনটি গ্রুপও হয়। তেমন দুটি গ্রুপ গতকাল একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করতে চায়। পরে এফডিসি কর্তৃপক্ষ এফডিসির জহির রায়হান ভিআইপি প্রজেকশন মিলনায়তনে কাউকেই কোনো অনুষ্ঠান করতে দেননি।
এফডিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া জানান, ‘বুধবার জহির রায়হান মিলনায়তনে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুপক্ষই একই জায়গায় সংবাদ সম্মেলন করার কথা বললে বিতর্ক এড়াতে কাউকেই জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। পরে তারা নিজেদের মতো করেই সংবাদ সম্মেলন করেছে।’
একইদিন আত্মপ্রকাশ হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন ফোরামের। তারা চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির অফিসের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় প্রযোজক সামসুল আলমকে। পরিচালক শাহীন সুমনকে সদস্যসচিব ঘোষণা করা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
এফডিসিতে চলচ্চিত্র অঙ্গনের ১৮টি সংগঠন থাকার পরেও কেন চলচ্চিত্র উন্নয়ন ফোরাম গঠনের দরকার পড়ল? এমন প্রশ্নে সামসুল আলম বলেন, ‘এটা অরাজনৈতিক একটি সংগঠন। অনেক আগে চলচ্চিত্র সমন্বয়ক পরিষদ নামে এমন একটি সংগঠন ছিল, সেটা সবার কথা বলত। সেটা বিলুপ্ত করা হয়। এবার অনুভব করলাম, সবাই একই সঙ্গে কাজ করার জন্য, চলচ্চিত্রের স্বার্থে এই প্ল্যাটফর্ম দরকার। ফিল্মের দুঃসময়ে আমাদের দাবিদাওয়া সরকারের কাছে পৌঁছাতে চাই।’
এদিকে চলচ্চিত্রের স্বার্থে সবাইকে নিয়ে ৫ আগস্টের পরে গঠন করা হয় অরাজনৈতিক আরেকটি সংগঠন। এর নাম বৈষম্যবিরোধী চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি। এর কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। সেই কমিটির প্রধান পরিচালক বদিউল আলম। তাদের সঙ্গে রয়েছেন শিবা শানুসহ অনেকে। এই প্রসঙ্গে বদিউল আলম জানান, সবাই যার যার জায়গা থেকে সিনেমার জন্য কথা বললে, কাজ করলে তাতে তাঁদের আপত্তি নাই। তাঁরা দলাদলি, পাল্টাপাল্টি সংগঠন চান না।
এফডিসির প্রযোজক এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে এফডিসিতে হঠাৎ করেই কেউ কেউ সুবিধা নিতে ও আলোচনায় থাকতে নিজেদের বিএনপিপন্থী বলে পরিচয় দিতে থাকেন। তাদের মধ্যে অনেকেই সংস্কারের কথা বলে কমিটি গঠন নিয়ে কথা বলেন। এটাও শোনা যায়, আগের চলমান সংগঠনের ওপর খবরদারি করতে তাঁরা পরিচালক, প্রযোজক ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অফিস কবজায় রাখতে চান।
এফডিসিতে কেউ কেউ নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় দিচ্ছেন, ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করছেন। এমনটা নিজেও শুনেছেন প্রযোজক সমিতির সাবেক নেতা সামসুল আলম।
তিনি বলেন, ‘১৫ বছর ধরে দেখেছি, আওয়ামী লীগ যারা করত তারা এফডিসিকে কী অবস্থা করে রেখেছে। এখানে তারা কোনো কথা বলতে দিত না। তাদের বাইরে কাজ করতে চাইলেও পারতাম না। এখন রাজনৈতিক ক্ষমতা যারা ব্যবহার করে, এটা আসলে শোভনীয় হবে না। এর ফলাফল ভালো হয় না। কারা ক্ষমতা দেখাচ্ছেন জানি না। রাজনৈতিক পরিচয় এখানে ব্যবহার না করাই ভালো। আমরা চলচ্চিত্রের মানুষ। এর বাইরে এফডিসিতে অন্য কোনো পরিচয় থাকা উচিত না। এ জন্য সিনিয়রদের পরামর্শ নিয়েই এগোতে হবে।’