লেবানের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘর্ষ ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করছে। এতে শুরুতেই চরম মূল্য দিতে হচ্ছে ইসরায়েলি সেনাদের। একদিনে ইসরায়েলের ১৭ সেনা হত্যার দাবি করেছে তারা।
বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, মাঠপর্যায় ও নিরাপত্তা সূত্র নিশ্চিত করেছে যে বৃহস্পতিবার যোদ্ধারা বীরত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। এদিন নিহত ইসরায়েলি কর্মকর্তা ও সেনার সংখ্যা ১৭ জনে পৌঁছেছে।
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় লেবাননের মারুন আল রাস গ্রামে ইসরায়েলি সেনারা প্রবেশের চেষ্টাকালে তাদের ওপর বোমা হামলা করা হয়েছে।
এর আগে বুধবারের (০২ অক্টোবর) ঘটনা উল্লেখ করে আলজাজিরা জানায়, অভিযান শুরু করে প্রথম দিনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। লেবাননের সীমান্তের ভেতরে প্রবেশ করে আবার পিছু হঠেছে তারা। এ ছাড়া সেনা থেকে শুরু করে ট্যাংকও গুঁড়িয়ে দিয়েছে হিজবুল্লাহ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রথম দিনে পৃথক তিনটি স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রথম দিনের সংঘর্ষে অন্তত আটজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ডজনের বেশি সেনা।
আলজাজিরা জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর হামলায় আহতদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবাননে সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছিল। যদিও বিষয়টি আগে থেকেই অনুমেয় ছিল, কেননা ২০০৬ সালে সবশেষ তারা মুখোমুখি হয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ২০০ রকেট ছুড়েছে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহ।
ইসরায়েলি সেনাপ্রধান হারজি হালেভি বলেন, ইসরায়েল পাল্টা জবাব দেবে। তারা ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। এটি মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে পারে।
উল্লেখ্য, লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। তাকে হত্যার পর লেবাননে স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় সেনারা।
হিজবুল্লাহরপক্ষ থেকেও প্রধান নেতাকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। গোষ্ঠীটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহ সংগঠনটির মহান ও অমর শহীদ কমরেডদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন; যাদের তিনি ৩০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এর আগে, হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার দাবি করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হিজবুল্লাহ প্রধানকে হত্যার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় তারা। তারা জানায়, বৈরুতে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন হাসান নাসরুল্লাহ।
হাসান নাসরুল্লাহ ৩২ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে হিজবুল্লাহকে আজকের সুসংহত অবস্থানে এনেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব ব্যাপক। ফিলিস্তিন ভূখণ্ড গ্রাস করার ইসরায়েলের খায়েশ পূরণে অন্যতম বাধা হাসান নাসরুল্লাহ ও তার বাহিনী।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মাথাব্যথার অন্যতম কারণ ছিলেন হাসান নাসরুল্লাহ। ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার নিহত হওয়া এ যাবৎকালে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বিজয়। অন্যদিকে হিজবুল্লাহ প্রধানের মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বড় শক্তি ইরানের জন্য বিরাট আঘাত। কারণ, এ অঞ্চলে ইরানের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু ছিলেন নাসরুল্লাহ।