এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ছাত্র-জনতা বিপ্লবে শুধু সরকার পরিবর্তন ছাড়া ‘অন্য কিছুই’ বদলায়নি।
আজ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে ‘দুর্যোগ প্রশমনে বিএনপির ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপির কর্মকা-ের ওপরে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের সহসভাপতি রুহুল আমিন।
বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় নাই- উল্লেখ করে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা মানুষের জন্যে, অধিকারের জন্যে, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে রক্ত দিয়েছে, যারা গুম হয়েছে, যারা সন্তান হারা হয়েছে, যারা পিতৃহারা হয়েছে, যারা মাহারা হয়েছে- তারা সব হারিয়েছে। মাঝখানে শুধু শেখ হাসিনাই নাই। সব আগের মতোই আছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আপনাদের(অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) মিথ্যা মামলার ব্যাপারে যদি আমরা সমব্যথী হতে পারি, সোচ্চার হতে পারি, তাহলে আপনারা দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে আমাদের মামলাগুলো আগের মতোই আছে, আমাদের আগের মতোই আদালতে যেতে হচ্ছে। এই কারণেই আমি বলেছি, সরকার বদলে গেছে কিন্তু ‘তুমি-আমি একই আছি, যা ছিলাম আগে’।
তিনি বলেন, ‘এক-এগারোর সময়ে আওয়ামী লীগের সকল মামলা যদি উঠে যেতে পারে, তাহলে এখন কেনো আমাদের মামলা উঠছে না। আপনারাই বলেছেন, আমাদের ওপরে মিথ্যা মামলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অপমানিত করা হয়েছিলো এতে গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাহলে আমাদের ওপরে এতো অত্যাচার-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা কেনো আপনাদের বিবেচনায় আসছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচন বিষয়ে যথাযথ নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন দ্রুত গঠনের আহবান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন যত শিগগিরই হবে জনগনের পার্টিসিপেশনের জোয়ারের রায়ে মধ্যে হবে। এই মুর্হুতে যদি নির্বাচন হয় তাহলে বাংলাদেশে নির্বাচনের অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে জনগন ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হবে।
তিনি বলেন, আজকে ১৬ বছর পর জনগনের একটা দাবি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। জনগনের আকাংখা, ভোটাধিকার, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা। যাকে খুশি তাকে যেন তারা ভোট দিতে পারে সেটাই দাবি,অন্য কোনো দাবি নাই। আজকে যে আকাংখা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে জনগনের ভোটাধিকার ফিরে পাবার যে আন্দোলনটা সেই আন্দোলন ছাত্রদের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। একই ধারার আন্দোলন।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘জাস্ট আপনি একটা নির্বাচন করে দিয়ে যাবেন সুন্দর করে।’ এক-এগারোয় যে বিরাজনীতিকরণের প্রচেষ্টা ছিল তারও উল্লেখ করেন তিনি।
অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যেটুকু রিফর্ম দরকার হয় সেইটুকু রিফর্মের জন্য বিবেচনা করবেন। আমরা তো ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি। এসব সংস্কার বিষয়ে আগামী দিনে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। জনগণের প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে আসবে, তারা ঐক্যমতের ভিত্তিতে সেসব সংস্কার করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি, আপনারা যদি ব্যর্থ হন জাতি ব্যর্থ হবে, আপনারা ব্যর্থ হওয়া মানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল ব্যর্থ হওয়া। আমরা দেখতে চাই আপনারা সফল হন। আমরা আপনাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে, আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবো। তবে মানুষের কাছে স্পষ্ট করেন আপনারা নির্বাচন করবেন।’
জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের সভাপতি মাহফুজ কবির মুক্তার সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মুহাম্মদ নেছারুল হকসহ জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।