আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ ছিল। তার আগেই বাংলাদেশ অধ্যায় শেষ হয়ে গেল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। জাতীয় দলের ক্রিকেটারের সঙ্গে অসদাচরণ ও আচরণবিধি ভাঙার দায়েই মূলত লঙ্কান এই কোচকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। এমনটাই জানালেন বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ।
অবশ্য বিসিবি এখনই বিদায় দিতে পারছে না হাথুরুসিংহেকে। মিরপুরে আজ (মঙ্গলবার) সংবাদ সম্মেলনে বোর্ড সভাপতি জানিয়েছেন, আইনগত কিছু বিষয় থাকায় শুরুতে তাকে শোকজ ও সাসপেন্ডের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। তারপরেই চুক্তি বাতিলের বিষয়টি আসবে। সে যাই হোক, বাংলাদেশে হাথুরু অধ্যায় শেষ। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন নতুন কোচের নামও ঘোষণা করে দিয়েছে বিসিবি। আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ক্যারিবিয়ান কোচ ফিল সিমন্সকে।
হাথুরুর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
২০১৪ সালে শেন জার্গেনসন বিদায়ের পর বাংলাদেশে ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছিল হাথুরুসিংহের। ২০১৭ সালের নভেম্বরে চুক্তির মেয়াদ শেষের আগেই বাংলাদেশের কোচ হিসেবে প্রথম মেয়াদ শেষ হয় তার। তারপর মাঝে রাসেল ডমিঙ্গোর জামানা।
২০২৩ সালে দ্বিতীয় দফায় ফের হাথুরুর মেয়াদ শুরু হয়। এবারও মেয়াদ শেষ করতে পারলেন না। বাংলাদেশের সঙ্গে আরও একবার বিচ্ছেদ হলেও দেশের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কান এই কোচকে মনে রাখতে হবে। সাফল্যের নিরিখে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল কোচ বলা যেতে পারে তাকে।
অবশ্য দলে নিজের কর্তৃত্ব, সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঝামেলাসহ আরও নানান কারণেও আলোচিত ছিলেন হাথুরুসিংহে। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটা ওঠে ২০২৩ ভারত বিশ্বকাপে। ভারতে ব্যর্থতায় ভরা বিশ্বকাপের পর আলোচনার তুঙ্গে ছিল নাসুম ইস্যু। টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে টাইগার এই ক্রিকেটারকে ‘শারিরীক হেনস্থার’ অভিযোগ উঠে খোদ হেড কোচের বিরুদ্ধে। যা গণমাধ্যমে প্রকাশ হতেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন লঙ্কান এই কোচ। যদিও পরে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
আজ এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। হাথুরু-নাসুম ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষ। হিট অব দ্য মোমেন্টে অনেক কিছু হতেই পারে। তবে একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটারকে আপনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে পারেন না। সে কারণে যে শাস্তি পেতে হয়, সেটাই হচ্ছে (ছাঁটাই)। এটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। এখন হয়েছে, আমি খুশি।’
নিজের খারাপ লাগা নিয়ে ফারুক বললেন, ‘একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমার খারাপ লেগেছে। জাতীয় দলের ক্রিকেটার দেশের গৌরব, ১৮ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। ওই নামটা আর না নিই, ওটা ছিল কোচের অসদাচরণ। ভিকটিম, প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রত্যক্ষদর্শীরও রিপোর্ট ছিল। তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে আমি অনেক কাজ করেছি।’
হাথুরুর বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ ছিল ছুটি কাটানো নিয়ে। এ প্রসঙ্গে ফারুক বলেন, ‘একজনের অসদাচরণের বিরুদ্ধে নোটিশ দেওয়ার কিছু নেই। সে যে সময় ছুটি কাটিয়েছে, সেটা ৩ মাসের বেশি। ওটাও অসদাচরণের অংশ। বিচ্ছিন্নভাবে তিনি ই-মেইলে জানিয়েছেন, তবে সেটা তিন মাসের বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। আপনার জবাবদিহি থাকতে হবে। এখানে নিয়ম ভেঙেছেন, আমরা জানিয়েছি যে খেলোয়াড়ের সঙ্গে তার অসদাচরণ এবং একজন কর্মী হিসেবে নিজের অসদাচরণ।’
গত ৫ আগস্ট দেশের ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর নাজমুল হাসান পাপনের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে বিসিবি সভাপতির কুর্সিতে বসেই হাথুরুকে বিদায়ের আভাস দিয়েছিলেন ফারুক আহমেদ। সভাপতি হওয়ার আগেও টাইগার হেড কোচকে নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক কটু মন্তব্য করেন তিনি। সেই ব্যাখ্যায় বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি না, আমি ওভাবে বলিনি। একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে বলেছি ওই কোচের বেশি কিছু দেওয়ার নেই। একজন কোচ হিসেবে তার সামর্থ্যে খুব বেশি আস্থা ছিল না।’