উত্তর সীমান্তে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর হামলা জোরদার করার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার লেবাননে যুদ্ধবিরতির ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
জেরুজালেম থেকে এএফপি জানায়, লেবানন ও গাজা’য় সাম্প্রতিক বোমা হামলার সমালোচনা করে এবং ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে আরো সাহায্য পৌঁছানোর দাবি জানিয়ে ইসরাইলের যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাপ বাড়ানো পর, নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য আসে। রোববার ইসরাইলি সরকারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে, মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন সতর্ক কওে বলেন যে, গাজায় ফিলিস্তিনদের আরও মানবিক সহায়তা না দিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রাখতে পারে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ভিত্তিক এএফপি’র পরিসংখ্যান অনুসারে, ইসরাইল গত মাসে বোমা হামলা বাড়ানোর পর লেবাননে কমপক্ষে ১,৩৫৬ জন নিহত হয়েছে, যদিও প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত আরো বেশি। আর বাস্তুচ্যুত করেছে অন্তত ৬৯০,০০০ মানুষকে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে, লেবাননে যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক সংকটে বাড়ছে। ক্ষুধা-বিধ্বস্ত গাজায় খাদ্য, চিকিৎসা সরবরাহ এবং আশ্রয়ের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও, জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের একজন মুখপাত্র মঙ্গলবার বলেছেন, গত বছরের অক্টোবরে ইসরাইলের হামলা শুরুর পর থেকে সহায়তা কঠোর নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথে এক ফোনালাপে নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি ‘একতরফা যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করছেন, যা লেবাননের নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিবর্তন করবে না এবং যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে বলেছেন, ইসরাইল এমন কোনো ব্যবস্থায় সম্মত হবে না, যা হিজবুল্লাহকে পুনরায় সশস্ত্র ও পুনঃসংগঠিত হতে বাধাগ্রস্থ করবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতামত শুনি, তবে আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিব।’
এদিকে এক টেলিভিশন বক্তৃতায়, হিজবুল্লাহর ডেপুটি লিডার নাইম কাসেম বলেন, একমাত্র সমাধান হল যুদ্ধবিরতি ও ইসরাইল জুড়ে তার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সুযোগ প্রসারিত করা। যেহেতু ইসরাইলি শত্রু পুরো লেবাননকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, তাই প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান থেকে ইসরাইলের যেকোনো স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করার অধিকার আমাদের আছে।’
বুধবারের সকালে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানায়, দেশটির উত্তরে লেবানন থেকে প্রায় ৫০টি প্রজেক্টাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের কথা জানানো হয় নাই। ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা সাফেদ শহরে একটি বড় ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
লেবাননের সরকারি ‘ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি’ জানিয়েছে, ইসরাইলের সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার লেবাননের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের বেকা উপত্যকাসহ বেশ ক’টি এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে। বালবেক শহরের একটি হাসপাতাল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশটির দক্ষিণে হামলায় নয়জন এবং পূর্বাঞ্চলে তিন শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে।