ভারতের ওড়িশার উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। এর প্রভাবে উত্তাল বঙ্গপোসাগর। তবে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে দানার বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়েনি। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালে কালবেলার স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এমনটাই জানা যায়।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বুধবার সকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের পর শুরু হয় বৃষ্টিপাত। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে। এ সময় কোথাও কোথাও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। তবে শুক্রবার সকাল থেকে বেশিরভাগ এলাকায় বৃষ্টি নেই। এ ছাড়া আবহাওয়াও অনেকটা স্বাভাবিক আছে।
এদিকে উপকূলীয় এলাকায় দানার বড় ধরনের প্রভাব না পড়লেও শুক্রবার সকালে আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (১৩ নম্বর) জানানো হয়, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার রাত ৩টার দিকে উত্তর ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি বর্তমানে উত্তর ওড়িশা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা/ঝোড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে আগামীকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, চাঁদপুরে বৈরী আবহাওয়া কেটে যাওয়ায় চাঁদপুর থেকে সব রুটের লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। আজ সকাল থেকে সব লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন চাঁদপুর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক বশির আলী খান।
তিনি বলেন, সব ধরনের লঞ্চ চলাচলের অনুমতি ভোর থেকে দেওয়া হয়েছে। এখন চাঁদপুর-মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ছোট লঞ্চগুলোও চলাচল করছে। আর বরিশাল রুটের লঞ্চ চলাচল করতেও বাধা নেই। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের মতোই সব রুটের লঞ্চ চলাচল করছে।
আজ ভোর ৫টা ৩০ মিনিট পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, স্থলভাগে আছড়ে পড়তে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় দানা।
ঘূর্ণিঝড় দানা বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ১২ মিনিটে আছড়ে পড়তে শুরু করে। ওড়িশার ভিতরকণিকা থেকে ধামারার মধ্যবর্তী স্থান হয়ে স্থলভাগ তছনছ করে ঘূর্ণিঝড়টি। প্রায় ৯ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আছড়ে পড়া শেষে এটির শেষ ভাগ ধীরে ধীরে ওড়িশা অতিক্রম করে চলেছে।
এর আগে গতরাতে ভারতের আলিপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, দানার প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে বিপুল জলোচ্ছ্বাস দেখা যাবে। ঢেউয়ের উচ্চতা হতে পারে ৯ ফুট থেকে ১৪ ফুট পর্যন্ত। সেই অনুযায়ী উপকূলের বাসিন্দাদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। চার জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে উপকূলের লাখো মানুষকে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতিভারি (২৮৯ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।