বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে পরিচিত কানাডায় এই প্রথম অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন দেশটির অর্ধেকেরও বেশি নাগরিক। সম্প্রতি কানাডার প্রধান দুই জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থার ফলাফল থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
আবাসন, জনপরিষেবা এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার জেরে ২০২৩ সাল থেকে অভিবাসীদের জোয়ার নিয়ন্ত্রণ করতে তৎপরতা শুরু করে কানাডার সরকার। এবার সাম্প্রতিক দু’টি জরিপের ফলাফলকে আমলে নিয়ে এ ইস্যুতে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
গত বুধবার ফলাফল প্রকাশ করেছে কানাডার বৃহত্তম জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা এনভায়ার্নোনিক্স ইনস্টিটিউট। সেই ফলাফল বলছে, দেশটির ৫৮ শতাংশ নাগরিক মনে করেন যে কানাডায় বর্তমানে অভিবাসীদের সংখ্যা অতিমাত্রায় বেশি এবং এ ইস্যুতে সরকারের শিগগিরই পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
তার আগের সপ্তাহে আরেক কানাডীয় সংস্থা অ্যাবাকাস ডাটা তাদের সাম্প্রতিক একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছিল। সেটির ফলাফল অনুযায়ী, কানাডার প্রতি দু’জন নাগরিকের একজন বিশ্বাস করেন যে অভিবাসীরা দেশের ক্ষতি করছে।
এনভায়ার্নোনিক্স ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ২০১৫ সাল থেকে কানাডায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমণ বাড়তে থাকে এবং তা রীতিমতো প্লাবনে পরিণত হয় করোনা মহামারির পর থেকে। অতিরিক্ত সংখ্যক এই অভিবাসীদের কারণে কানাডার আবাসন, জনপরিষেবা এবং সামাজিক শৃঙ্খলায় ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব পড়ছে এবং নাগরিকরাও ক্রমশঃ বিরক্ত হয়ে উঠছেন। তারা আরও জানান, অভিবাসী আগমনের জেরে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কানাডার জনসংখ্যা ৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং ১৯৫১ সালের পর এই প্রথম দেশটিতে মাত্র এক বছরে এই পরিমাণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে।
এক কর্মকর্তা জানান, কানাডার নাগরিকদের মধ্যে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে তা শক্তিশালী হচ্ছে। গত বছরও ৪৪ শতাংশ নাগরিক অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন।
এদিকে দুই সংস্থার জরিপের ফলাফল প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ট্রুডো জানিয়েছেন, আগামী ২০২৫ ও ’২৬ সালে মোট ১০ লাখ অভিবাসী গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল সরকার; তবে জনজরিপের ফলাফল প্রকাশের পর সেই লক্ষ্যমাত্রায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। তিনি জানান, আগামী ২০২৫ সালে ৩ লাখ ৯৫ হাজার এবং ২০২৬ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার অভিবাসী নেবে কানাডা।
বিবৃতিতে ট্রুডো বলেন, “করোনা মহামারির পর দেশের অর্থনীতিতে গতি আনতে আমরা অভিবাসীদের আগমন ইস্যুতে শিথিল ছিলাম, কিন্তু এখন সার্বিক পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা এবং সমন্বয়ের প্রয়োজন। আমরা চাই, কানাডায় বসবাসকারী কেউ যেন আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সুরক্ষা ও জরুরি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।”