ওয়ানডে, টেস্ট কিংবা টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিচ্ছিরি ব্যাটিংয়ে প্রদর্শনী চলছেই। ভারতের মাটিতে সিরিজে ভরাডুবির নেপথ্যে ছিল ব্যাটিং ব্যর্থতা, ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজেও চিত্রটা বদলায়নি। সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে বিবর্ণ ব্যাটিংয়ে যেন নিজেদেরই ছাড়িয়ে গেল টিম টাইগার্স।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভার ৪ বলে ২৩৫ রানে অলআউট হয়েছিল আফগানিস্তান। রান তাড়া করতে নেমে ৩৪ ওভার ৩ বল ব্যাপ্তি ইনিংসে ১৪৩ রানের বেশি জড়ো করতে পারেনি বাংলাদেশ।
যদিও টার্গেট তাড়ায় বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিল টিম টাইগার্স। ২ উইকেট হারিয়ে দলীয় শতক পূরণ করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৩ উইকেটে ১৩১ থেকে আর ১২ রান যোগ করতেই বাকি ৭ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। গতকাল শারজায় আফগান ক্রিকেট বোর্ডের আমন্ত্রণে খেলা দেখতে এসেছিলেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম (বুলবুল)।
বাংলাদেশের এমন ভরাডুবি দেখে আইসিসির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত সাবেক এই ক্রিকেটার সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘জয়-পরাজয় তো থাকতেই পারে, কিন্তু অধিনায়কত্ব আর ব্যাটিং পরিকল্পনা দেখে সত্যিই বিস্মিত হয়েছি। সবকিছুই যেন ক্লান্ত দেখাচ্ছিল—শরীরী ভাষা, বলের প্রতি মনোযোগ, প্রি-বল রুটিন, পুরোটা মিলিয়ে পরিকল্পনা খুবই দুর্বল মনে হয়েছে।’
বুলবুলের সঙ্গে সেই অর্থে দ্বিমত করার সুযোগ নেই কারোরই। পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ক্রিকেটারদের নিবেদন, চেষ্টা আর দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বাংলাদেশের হতশ্রী ব্যাটিং নিয়ে ঢাকা পোস্টকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের সাবেক দুই তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল-মোহাম্মদ রফিক। এ ছাড়া দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের কোচ সোহেল ইসলামও কথা বললেন।
ব্যাটিং ধস নিয়ে কোচ সোহেল বললেন, ‘বিষয়টা ড্রেসিংরুমে না থাকলে দূর থেকে বলা কঠিন। ওদের সাথে থাকলে বুঝতে পারতাম ড্রেসিংরুমে ওদের মানসিক অবস্থা কি, কি চিন্তা করছিল। মনে হয়েছে ব্যাটিংটা আমরা ভালো করতে পারিনি, ওই সময়ে দ্রুত উইকেট পড়ে গেছে। প্রথমে ভালোই খেলছিল ব্যাটাররা কিন্তু শান্তর উইকেটটা আসলে ছন্দ নষ্ট করে দিয়েছে। এরপর দ্রুত একের পর এক উইকেট পড়ে গেছে, খেলাটা আসলে আমাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল, কিন্তু মোমেন্টামটা হঠাৎ করে ঘুরে যায় ওই সময়।’
দলের এমন পারফরম্যান্সে সাবেক তারকা স্পিনার রফিক ক্ষোভ ঝাড়লেন খানিকটা এভাবে, ‘আমরা সবসময়ই অজুহাত খুঁজে বের করি আর বলি পরবর্তী ম্যাচ। এই পরবর্তী ম্যাচ বলতে বলতে, আমরা সিরিজ হেরে যাই। আমরা যদি অজুহাত দিতেই থাকি তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেট কি উন্নতি করছে? আমার মনে হয় না করেছে।’
‘কালকের ম্যাচটা দেখেন ২৩৫ রানে আটকানোর পরেও ৯২ রানে হেরে গেল। কোথায় ক্রিকেট যাচ্ছে এটা বলা মুশকিল হয়ে গিয়েছে। বোলাররা এতো দারুণ বল করেছে, কিন্তু ব্যাটাররা….।’
ক্রিকেটারদের এই নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সঙ্গে দায়িত্ববোধ নিয়েও। রফিক বললেন, ‘ক্রিকেটারদের অবশ্যই দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। এটা যদি না করে পরবর্তী ম্যাচ বলে থাকি তাহলে তো হবে না। শেষ ২ বছরে তিন ফরম্যাটেই তেমন একটা ভালো খেলতে পারছে না দল। মাঝে পাকিস্তান সিরিজটা ভালো গিয়েছে। পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে গিয়ে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে তো অন্যদের সঙ্গেও ভালো ক্রিকেট খেলা উচিত।’
আরও যোগ করেন, ‘আমরা এখন কোথায় দাঁড়াচ্ছি তাহলে, আমরা একটার পর একটা অজুহাত দিয়ে যাচ্ছি। পরবর্তী ম্যাচ পরবর্তী ম্যাচ, এখন আমাদের জেতার সময়। এটা এখন খেলোয়াড়দের মধ্যে যাচ্ছে কি না জানি না, সময়ও চলে যাচ্ছে।’
সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল অবশ্য পুরো ব্যাপারটিকে একটু ভিন্ন চোখে দেখছেন। তার মতে, কেউ তো ইচ্ছা করে খারাপ খেলে না, ‘এটা তো আসলে কেউই আশা করেনি, ব্যাটাররাও আশা করে না, দলও আশা করেনি। কোয়ালিটি বোলিংয়ের বিপক্ষে এমনটা হতেই পারে আফগানিস্তানের যে কোয়ালিটি স্পিনার ছিল।’
দলের সমস্যা কোথায় সেই ব্যাখায় আশরাফুল বললেন, ‘সমস্যাটা আমার মনে হয় মানসিক ও স্কিল দুই জায়গাতেই আছে। দেখেন এই ফরম্যাটটা কিন্তু আমরা সাত মাস পরে খেললাম। এর মাঝখানে বাকি দুই ফরম্যাটটা আমরা ভালো করতে পারিনি কিন্তু এই ফরম্যাটে কিন্তু আমরা এরকম আশা করি না আমরা ভালো খেলে থাকি।’
নিবদনের ঘাটতি কি না সেই প্রশ্নে অবশ্য আশরাফুল বললেন, ‘না আমি এরকম দেখছি না, সবাই চেষ্টা করছে এমন না যে চেষ্টা করছে না। খারাপ হতেই পারে একটা পার্টনারশিপে মনে হচ্ছিল যে আমরা জিতে যাব কিন্তু পরবর্তীতে তো আর হলো না।’