বিপুল ভোটে হোয়াইট হাউসে ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে চাপ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম বড় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়িয়ে দেওয়া। এ নিয়ে তিনি প্রায় প্রতিটি সমাবেশে বক্তব্য দেন।
অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি অভিহিত করে তাদের বিতাড়িত করে আবারও আমেরিকাকে মহান করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
বিজয়ের পরও তিনি সেই প্রতিশ্রুতি থেকে ফিরে আসেননি। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) এনবিসি নিউজের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে দেওয়া ট্রাম্পের বক্তব্যে তা স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে যাদের থাকার বৈধ অনুমতি নেই এমন মানুষকে তাড়ানো ছাড়া তার প্রশাসনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের সত্যিই কোনো বিকল্প নেই।’
ট্রাম্পের রানিংমেট জে ডি ভ্যান্সের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ১০ লাখ অভিবাসীকে বের করে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু কাজটা যে ততটা সহজ নয়, তা ট্রাম্পের আগের আমলেও দেখা গেছে। কারণ সে সময় তাকে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ হিমশিম খেতে হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এবার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে বিদেশি কূটনীতিক পর্যন্ত সবাইকে ডেকে অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে বলতে পারেন। এ কাজে রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন অঙ্গরাজ্যগুলোর নেতাদের সহযোগিতা নিতে পারেন।
এমনকি যেসব রাজ্যে আইনি বিধিনিষেধ আছে, সেখানকার তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপও নিতে পারেন। তবে অভিবাসী নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা বলছেন, ট্রাম্পের অভিবাসী বিতাড়নের চেষ্টা ব্যয়বহুল, বিভাজন সৃষ্টিকারী ও অমানবিক হয়ে উঠতে পারে। এতে অনেক পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বলছেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের তুলনায় এবারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে আরও আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে, অন্য দেশ বিতাড়িত অভিবাসী গ্রহণ করবে কি না।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনী প্রচারজুড়ে ট্রাম্প অভিবাসীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য অব্যাহত রাখেন। মূলত স্থানীয়দের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেতে ট্রাম্প অভিবাসীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। তার প্রচারাভিযানজুড়ে বারবার উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করেছেন। তিনি অভিবাসীদের হিংসাত্মক অপরাধে ইন্ধন দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তাদের ‘পশু’ বলেছেন।
এপিল মাসে মিশিগানে ও উইসকনসিনের গ্রিন বে এলাকায় প্রচার সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের ‘পশু’ ও ‘অমানুষ’ বলে মন্তব্য করেন। তখন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী অভিবাসীদের গালাগাল করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেছিলেন, জর্জিয়ার এক শিক্ষার্থী খুনের পেছনে জড়িত ভেনেজুয়েলার এক অভিবাসী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু অভিবাসী আছে যারা পুরোপুরি মানুষ না। তাদের পশু বলে ডাকতে ডেমোক্র্যাটরা নিষেধ করে। তারা তাদের মানুষ বলে। আমি বলি, এসব অভিবাসী মানুষ নয়। তারা পশু।’ এ ছাড়া অভিবাসীরা মার্কিনিদের ওপর আক্রমণ করার জন্য সেনাবাহিনী গঠন করছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য জায়গা থেকে আসা অভিবাসীরা আমেরিকানদের শহর দখলের ষড়যন্ত্রে মেতেছে; এমন অভিযোগও করেছিলেন ট্রাম্প।